পরে ঈশ্বর তাঁহার সৃষ্ট বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, সকলই অতি উত্তম। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে ষষ্ঠ দিবস হইল।
ফলতঃ তাঁহার অদৃশ্য গুণ, অর্থাৎ তাঁহার অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে, এই জন্য তাঁহাদের উত্তর দিবার পথ নাই;
আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্মিত আকাশ-মণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি,
[বলি,] মর্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর?
হে সদাপ্রভু, তোমার নির্মিত বস্তু কেমন বহুবিধ! তুমি প্রজ্ঞা দ্বারা সেই সমস্ত নির্মাণ করিয়াছ; পৃথিবী তোমার সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ।
ঐ যে সমুদ্র, বৃহৎ ও চারিদিকে বিস্তীর্ণ, তথায় জঙ্গমেরা থাকে, তাহারা অগণ্য; ক্ষুদ্র ও প্রকাণ্ড কত জীবজন্তু থাকে।
ইহা পবিত্রতম কহেন। ঊর্ধ্বদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, ঐ সকলের সৃষ্টি কে করিয়াছে? তিনি বাহিনীর ন্যায় সংখ্যানুসারে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনেন, সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে আহ্বান করেন; তাঁহার সামর্থের আধিক্য ও শক্তির প্রাবল্য প্রযুক্ত তাহাদের একটিও অনুপস্থিত থাকে না।
আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্যরূপে নির্মিত; তোমার কর্ম সকল আশ্চর্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে।
পৃথিবী ও তাহার সমস্ত বস্তু সদাপ্রভুরই; জগৎ ও তন্নিবাসিগণ তাঁহার।
সেই প্রতাপের রাজা কে? বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তিনিই প্রতাপের রাজা। [সেলা]
কেননা তিনিই সমুদ্রগণের উপরে তাহা স্থাপন করিয়াছেন, নদীগণের উপরে তাহা দৃঢ় করিয়া রাখিয়াছেন।
কারণ তোমরা আনন্দ সহকারে বাহিরে যাইবে, এবং শান্তিতে তোমাদিগকে লইয়া যাওয়া হইবে। পর্বত ও উপপর্বতগণ তোমাদের সমক্ষে উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান করিবে, এবং ক্ষেত্রের সমস্ত বৃক্ষ হাততালি দিবে।
কণ্টকবৃক্ষের পরিবর্তে দেবদারু, শ্যাকুলের পরিবর্তে গুলমেঁদি উৎপন্ন হইবে; আর তাহা সদাপ্রভুর কীর্তিস্বরূপ হইবে, লোপহীন নিত্যস্থায়ী চিহ্ন হইবে।
তিনি নিজ শক্তিতে পৃথিবী গঠন করিয়াছেন, নিজ জ্ঞানে জগৎ স্থাপন করিয়াছেন, নিজ বুদ্ধিতে আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছেন।
তিনি রব ছাড়িলে আকাশে জলরাশির শব্দ হয়, তিনি পৃথিবীর প্রান্ত হইতে বাষপ উত্থাপন করেন; তিনি বৃষ্টির নিমিত্ত বিদ্যুৎ গঠন করেন, তিনি আপন ভাণ্ডার হইতে বায়ু বাহির করিয়া আনেন।
আকাশমণ্ডল আনন্দ করুক, পৃথিবী উল্লসিত হউক; সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সকলই গর্জন করুক;
ক্ষেত্র ও তথাকার সকলই উল্লসিত হউক; তখন বনের সমস্ত বৃক্ষ আনন্দে গান করিবে;
সদাপ্রভু প্রজ্ঞা দ্বারা পৃথিবীর মূল স্থাপন করিয়াছেন, বুদ্ধি দ্বারা আকাশমণ্ডল অটল করিয়াছেন;
কারণ তদ্দ্বারা তুমি আয়ুর দীর্ঘতা, জীবনের বৎসর-বাহুল্য, এবং শান্তি প্রাপ্ত হইবে।
তাঁহার জ্ঞান দ্বারা গভীর জলধি সকল খুলিয়া গেল, আর আকাশ বিন্দু বিন্দু শিশির বর্ষণ করিল।
কেবলমাত্র তুমিই সদাপ্রভু; তুমি স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ এবং তাহার সমস্ত বাহিনী, পৃথিবী ও তথাকার সমস্ত এবং সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত নির্মাণ করিয়াছ, আর তুমি তাহাদের সকলের স্থিতি করিতেছ, এবং স্বর্গের বাহিনী তোমার কাছে প্রণিপাত করে।
হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমি অতি মহান; তুমি প্রভা ও প্রতাপ পরিহিত।
তিনি তলভূমিতে প্রবাহ প্রেরণ করিয়া থাকেন; সেই সকল পর্বতগণের মধ্যে ভ্রমণ করে।
সেই সকল মাঠের সমস্ত পশুকে জল দেয়; বনগর্দভেরা তৃষ্ণা নিবারণ করে।
সেই সকলের তীরে আকাশের পক্ষিগণ বাসা করে, ডালের মধ্য হইতে নিজ নিজ রব শুনায়।
তিনি আপন কক্ষ হইতে পর্বতে জল সেচন করেন; তোমার কার্যের ফলে পৃথিবী পরিতৃপ্ত হয়।
তিনি পশুগণের জন্য তৃণ অঙ্কুরিত করেন; মনুষ্যের সেবার জন্য ওষধি অঙ্কুরিত করেন; এইরূপে ভূমি হইতে ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন,
আর মর্ত্যের চিত্তানন্দ-জনক দ্রাক্ষারস, মুখের প্রফুল্লতা-জনক তৈল, ও মর্ত্যের চিত্তবল-সাধক ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন।
পরিতৃপ্ত হইয়াছে সদাপ্রভুর বৃক্ষ সকল, লিবানোনের সেই এরস বৃক্ষরাজি, যাহা তিনি রোপণ করিয়াছেন।
তাহার মধ্যে ক্ষুদ্র পক্ষিগণ বাসা করে; দেবদারু বৃক্ষ হাড়গিলার বাটী।
উচ্চ পর্বত সকল বনচ্ছাগের আবাস, শৈল সকল শাফন পশুর আশ্রয়।
তিনি ঋতুর জন্য চন্দ্র নির্মাণ করিয়াছেন, সূর্য আপন অস্তগমনের সময় জানে।
তুমি বস্ত্রের ন্যায় দীপ্তি পরিধান করিয়াছ, আকাশমণ্ডলকে চন্দ্রাতপের ন্যায় বিস্তার করিয়াছ।
স্বর্গে ও পৃথিবীতে, দৃশ্য কি অদৃশ্য যাহা কিছু আছে, সিংহাসন হউক, কি প্রভুত্ব হউক, কি আধিপত্য হউক, কি কর্তৃত্ব হউক, সকলই তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার নিমিত্ত সৃষ্ট হইয়াছে;
ঈশ্বর, যিনি জগৎ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু নির্মাণ করিয়াছেন, তিনিই স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, সুতরাং হস্তনির্মিত মন্দিরে বাস করেন না;
কোন কিছুর অভাব প্রযুক্ত মনুষ্যদের হস্ত দ্বারা সেবিতও হন না, তিনিই সকলকে জীবন, শ্বাস ও সমস্তই দিতেছেন।
তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর, স্বর্গ হইতে সদাপ্রভুর প্রশংসা কর; ঊর্ধ্বস্থানে তাঁহার প্রশংসা কর।
বন্য পশুগণ ও সমস্ত গৃহপালিত পশু; সরীসৃপ ও উড্ডীয়মান পক্ষী সকল;
পৃথিবীর রাজগণ ও সমস্ত জাতি; লোকপালগণ ও পৃথিবীর সকল বিচারকর্তা;
যুবকগণ ও যুবতী সকল; বৃদ্ধগণ ও বালক-বালিকাসমূহ;
সকলে সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা করুক, কেননা কেবল তাঁহারই নাম উন্নত, তাঁহার প্রভা পৃথিবীর ও স্বর্গের উপরিস্থ।
আর তিনি আপন প্রজাদের জন্য এক শৃঙ্গ উত্তোলন করিয়াছেন, তাহা প্রশংসা-ভূমি, তাঁহার সমস্ত সাধুর নিমিত্ত, ইস্রায়েল-সন্তানদের নিমিত্ত, যাহারা তাঁহার নিকটস্থ প্রজা। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর।
হে তাঁহার সমস্ত দূত, তাঁহার প্রশংসা কর; হে তাঁহার সমস্ত বাহিনী, তাঁহার প্রশংসা কর।
হে সূর্য ও চন্দ্র, তাঁহার প্রশংসা কর; হে দীপ্তিময় সমস্ত তারা, তাঁহার প্রশংসা কর।
হে স্বর্গের স্বর্গ, তাঁহার প্রশংসা কর। হে আকাশমণ্ডলের ঊর্ধ্বস্থিত জলসমূহ, তোমরাও তাঁহার প্রশংসা কর।
ইহারা সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা করুক, কেননা তিনি আজ্ঞা করিলেন, আর ইহারা সৃষ্ট হইল;
তিনি চিরকালের জন্য তাহাদিগকে স্থাপন করিয়াছেন, তিনি এক বিধি দিয়াছেন, কেহ তাহা উল্লঙ্ঘন করিবে না।
যখন আমি পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, তখন তুমি কোথায় ছিলে? যদি তোমার বুদ্ধি থাকে তবে বল,
যখন তাহারা গুহামধ্যে শয়ন করে, গুপ্ত স্থানে বসিয়া মৃগের অপেক্ষায় থাকে?
কে দাঁড়কাককে আহার যোগাইয়া দেয়, যখন তাহার শাবকগণ ঈশ্বরের নিকটে আর্তরব করে, ও খাদ্যের অভাবে ভ্রমণ করে?
তুমি কি জান, কে পৃথিবীর পরিমাণ নিরূপণ করিল? কে তাহার উপরে মানরজ্জু ধরিল?
তাহার চুঙ্গী সকল কিসের উপরে স্থাপিত হইল? কে বা তাহার কোণের প্রস্তর বসাইল?
তৎকালে প্রভাতীয় নক্ষত্রগণ একসঙ্গে আনন্দরব করিল, ঈশ্বরের পুত্রগণ সকলে জয়ধ্বনি করিল।
যিনি বুদ্ধি দ্বারা আকাশমণ্ডল নির্মাণ করিয়াছেন; তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী
যিনি জলের উপরে ভূমণ্ডল বিস্তার করিয়াছেন; তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী
যিনি বৃহৎ জ্যোতির্গণ নির্মাণ করিয়াছেন; তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী
যিনি দিনমানে কর্তৃত্ব করণার্থে সূর্য গড়িয়াছেন; তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী
রাত্রিতে কর্তৃত্ব করণার্থে চন্দ্র ও তারকামালা গড়িয়াছেন; তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী
সদাপ্রভুর কর্ম সকল মহৎ; তৎপ্রীত সকলে সেই সকল অনুশীলন করে।
তাঁহার ক্রিয়া প্রভা ও প্রতাপস্বরূপ, তাঁহার ধর্মশীলতা নিত্যস্থায়ী।
তিনি সকলই যথাকালে মনোহর করিয়াছেন, আবার তাহাদের হৃদয়মধ্যে চিরকাল রাখিয়াছেন; তথাপি ঈশ্বর আদি অবধি শেষ পর্যন্ত যে সকল কার্য করেন, মনুষ্য তাহার তত্ত্ব বাহির করিতে পারে না।
পৃথিবীর গভীর স্থান সকল তাঁহার হস্তগত, পর্বতগণের চূড়া সকলও তাঁহারই।
সমুদ্র তাঁহার, তিনিই তাহা নির্মাণ করিয়াছেন, তাঁহারই হস্ত শুষ্ক ভূমি গঠন করিয়াছে।
আমি পৃথিবী নির্মাণ করিয়াছি, ও পৃথিবীর উপরে মনুষ্যের সৃষ্টি করিয়াছি; আমি নিজ হস্তে আকাশমণ্ডল বিস্তীর্ণ করিয়াছি, এবং আকাশের সমস্ত বাহিনীকে আজ্ঞা দিয়া আসিতেছি।
যেহেতু সকলই তাঁহা হইতে ও তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার নিমিত্ত। যুগে যুগে তাঁহারই গৌরব হউক। আমেন।
‘হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলই সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।’
তিনি শূন্যের উপরে উত্তর কেন্দ্র বিস্তার করিয়াছেন, অবস্তুর উপরে পৃথিবীকে ঝুলাইয়াছেন,
তিনি স্বীয় নিবিড় মেঘে জল বদ্ধ করেন, তথাপি জলধর তাহার ভারে বিদীর্ণ হয় না।
তিনি মেঘমালায় আকাশমণ্ডল আচ্ছন্ন করেন, তিনি পৃথিবীর জন্য বৃষ্টি প্রস্তুত করেন, তিনি পর্বতগণের উপরে তৃণ উৎপাদন করেন।
তিনি পশুকে তাহার খাদ্য দেন, দাঁড়কাকের শাবকদিগকে দেন, যাহারা ডাকিয়া উঠে।
তুমি কি আজন্মকাল কখনও প্রভাতকে আজ্ঞা দিয়াছ, অরুণকে তাহার উদয় স্থান জানাইয়াছ;
যেন তাহা পৃথিবীর প্রান্ত সকল ধরে, আর দুষ্টগণকে তাহা হইতে ঝাড়িয়া ফেলা যায়?
কেননা বনের সমস্ত জন্তু আমার, সহস্র সহস্র পর্বতীয় পশু আমার।
আমি পর্বতগণের সমস্ত পক্ষীকে জানি, মাঠের প্রাণী সকল আমার সম্মুখবর্তী।
সদাপ্রভু কহেন তোমরা কি আমাকে ভয় করিবে না? আমার সাক্ষাতে কি কম্পমান হইবে না? আমি তো বালুকা দ্বারা সমুদ্রের সীমা নিত্যস্থায়ী বিধিক্রমে স্থির করিয়াছি; সে তাহা উল্লঙ্ঘন করিতে পারে না; তাহার তরঙ্গ আস্ফালন করিলেও কৃতার্থ হয় না, কল্লোলধ্বনি করিলেও সীমা অতিক্রম করিতে পারে না।
তিনিই পৃথিবীর সীমাচক্রের উপরে উপবিষ্ট; তন্নিবাসিগণ ফড়িঙ্গস্বরূপ; তিনি চন্দ্রাতপের ন্যায় আকাশমণ্ডল বিস্তার করেন, বাসতাম্বুর ন্যায় তাহা টাঙ্গাইয়া দেন।
আর বস্ত্রের নিমিত্ত কেন ভাবিত হও? ক্ষেত্রের কানুড় পুষ্পের বিষয়ে বিবেচনা কর, সেইগুলি কেমন বাড়ে;
সেই সকল শ্রম করে না, সূতাও কাটে না; তথাপি আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, শলোমনও আপনার সমস্ত প্রতাপে ইহার একটির ন্যায় সুসজ্জিত ছিলেন না।
সমস্ত পৃথিবী তোমার কাছে প্রণিপাত করিবে, ও তোমার উদ্দেশে সঙ্গীত করিবে; তাহারা তোমার নাম কীর্তন করিবে। [সেলা]
আমি পর্বতগণের দিকে চক্ষু তুলিব; কোথা হইতে আমার সাহায্য আসিবে?
সদাপ্রভু হইতে আমার সাহায্য আইসে, তিনি আকাশ ও পৃথিবীর নির্মাণকর্তা।
বিশ্বাসে আমরা বুঝিতে পারি যে, যুগকলাপ ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা রচিত হইয়াছে, সুতরাং কোন প্রত্যক্ষ বস্তু হইতে এই সকল দৃশ্য বস্তুর উৎপত্তি হয় নাই।
যখন তিনি আকাশমণ্ডল প্রস্তুত করেন, তখন আমি সেখানে ছিলাম; যখন তিনি জলধিপৃষ্ঠের চক্রাকার সীমা নিরূপণ করিলেন,
যখন তিনি ঊর্ধ্বস্থ আকাশ দৃঢ়রূপে নির্মাণ করিলেন, যখন জলধির প্রবাহ সকল প্রবল হইল,
যখন তিনি সমুদ্রের সীমা স্থির করিলেন, যেন জল তাঁহার আজ্ঞা উল্লঙ্ঘন না করে, যখন তিনি পৃথিবীর মূল নিরূপণ করিলেন;
কে আপন করতলে জলরাশি মাপিয়াছে, বিঘত দিয়া আকাশমণ্ডল পরিমাণ করিয়াছে, পৃথিবীর ধুলা পালিতে ভরিয়াছে, পাল্লাতে পর্বতগণকে, ও নিক্তিতে উপপর্বতগণকে তৌল করিয়াছে ?
তোমার হস্তকৃত বস্তু সকলের উপরে তাহাকে কর্তৃত্ব দিয়াছ, তুমি সকলই তাহার পদতলস্থ করিয়াছ-
সমস্ত মেষ ও গরু, আর বন্য পশুগণ,
শূন্যের পক্ষিগণ, এবং সাগরের মৎস্য, যাহা কিছু সমুদ্রপথগামী।
তথাপি তিনি আপনাকে সাক্ষ্যবিহীন রাখেন নাই, কেননা তিনি মঙ্গল করিতেছেন, আকাশ হইতে আপনাদিগকে বৃষ্টি এবং ফলোৎপাদক ঋতুগণ দিয়া ভক্ষ্যে ও আনন্দে আপনাদের হৃদয় পরিতৃপ্ত করিয়া আসিতেছেন।
বন্য জন্তুগণ, শৃগাল ও উষ্ট্র পক্ষী সকল আমার গৌরব করিবে; কেননা আমি প্রান্তরের মধ্যে জল ও মরুভূমিতে নদনদী যোগাই, আমার প্রজাবৃন্দকে, আমার মনোনীত লোকদিগকে, পান করাইবার নিমিত্তই যোগাই;
সেই যে প্রজাবৃন্দকে আমি আপনার নিমিত্ত নির্মাণ করিয়াছি, তাহারা আমার প্রশংসা প্রচার করিবে।
সদাপ্রভু, তোমার দয়া আকাশমণ্ডলে ব্যাপ্ত, তোমার বিশ্বস্ততা গগনস্পর্শী।
তোমার ধর্মশীলতা ঈশ্বরের পর্বতসমূহের তুল্য, তোমার শাসন সকল মহাজলধিস্বরূপ; সদাপ্রভু, তুমি মনুষ্য ও পশু রক্ষা করিয়া থাক।
তিনি আজ্ঞা দ্বারা প্রচণ্ড বায়ু উত্থাপন করেন, তাহা জলের তরঙ্গমালা উঠায়।
তাহারা আকাশে উঠে, তাহারা জলধিতলে নামে; বিপাকে পড়িয়া তাহাদের প্রাণ গলিয়া যায়।
তাহারা মত্তের ন্যায় হেলিয়া দুলিয়া ঢুলিয়া পড়ে, তাহাদের সমস্ত বুদ্ধি বিলুপ্ত হয়।
সঙ্কটে তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করে, আর তিনি তাহাদিগকে কষ্ট হইতে বাহির করেন।
তিনি ঝটিকা প্রশমিত করেন; তাহাতে জলরাশির তরঙ্গ সকল নিস্তব্ধ হয়।
কেননা সদাপ্রভু মহান ঈশ্বর, তিনি সমুদয় দেবতার উপরে মহান রাজা।
পৃথিবীর গভীর স্থান সকল তাঁহার হস্তগত, পর্বতগণের চূড়া সকলও তাঁহারই।
পরে ঈশ্বর কহিলেন, রাত্রি হইতে দিবসকে বিভিন্ন করণার্থে আকাশমণ্ডলের বিতানে জ্যোতির্গণ হউক; সেই সমস্ত চিহ্নের জন্য, ঋতুর জন্য এবং দিবসের ও বৎসরের জন্য হউক;
এবং পৃথিবীতে দীপ্তি দিবার জন্য দীপ বলিয়া তাহা আকাশমণ্ডলের বিতানে থাকুক; তাহাতে সেইরূপ হইল।
তিনি পশুগণের জন্য তৃণ অঙ্কুরিত করেন; মনুষ্যের সেবার জন্য ওষধি অঙ্কুরিত করেন; এইরূপে ভূমি হইতে ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন,
আর মর্ত্যের চিত্তানন্দ-জনক দ্রাক্ষারস, মুখের প্রফুল্লতা-জনক তৈল, ও মর্ত্যের চিত্তবল-সাধক ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন।
সকলে সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা করুক, কেননা কেবল তাঁহারই নাম উন্নত, তাঁহার প্রভা পৃথিবীর ও স্বর্গের উপরিস্থ।
সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সকলই গর্জন করুক, ভুবন ও তন্নিবাসিগণও করুক;
নদ-নদীগণ করতালি দিউক, পর্বতগণ একসঙ্গে আনন্দগান করুক;
আমি বৃক্ষাদিশূন্য গিরিশ্রেণীতে নদনদী, ও সমস্থলীর মধ্যে স্থানে স্থানে উনুই খুলিব; আমি প্রান্তরকে জলাশয় ও শুষ্ক ভূমিকে জলের প্রস্রবণ করিব।
আমি প্রান্তরে এরস, বাবলা, গুলমেদি ও তৈলবৃক্ষ রোপণ করিব; আমি মরুভূমিতে দেবদারু, তিধর ও তাশূর বৃক্ষ একত্র লাগাইব;
কে পূর্বদিক হইতে একজনকে উত্তেজিত করিল? তিনি ধর্মশীলতায় তাহাকে ডাকিয়া আপনার অনুগামী করেন; তিনি জাতিগণকে তাহার সম্মুখে দিবেন, রাজগণের উপরে তাহাকে কর্তৃত্ব করাইবেন, তিনি তাহাদিগকে ধূলির ন্যায় তাহার খড়্গের সম্মুখে দিবেন, চালিত নাড়ার ন্যায় তাহার ধনুকের সম্মুখে দিবেন।
যেন তাহারা দেখিয়া জানিয়া, বিবেচনা করিয়া একেবারে নিশ্চয় বুঝিতে পারে যে, সদাপ্রভুর হস্ত এই কার্য করিয়াছে, ইস্রায়েলের পবিত্রতম ইহা সৃষ্টি করিয়াছেন।
কারণ দেখ, আমি নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর সৃষ্টি করি; এবং পূর্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।
কিন্তু আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর; কারণ দেখ, আমি যিরূশালেমকে উল্লাসভূমি ও তাহার প্রজাদিগকে আনন্দভূমি করিয়া সৃষ্টি করি।
হা, প্রভু সদাপ্রভু! দেখ, তুমিই আপন মহাপরাক্রম ও বিস্তারিত বাহু দ্বারা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্মাণ করিয়াছ; তোমার অসাধ্য কিছুই নাই।
তিনি পৃথিবীতে আপন আজ্ঞা পাঠান, তাঁহার বাক্য বেগে ধাবমান হয়।
তিনি মেষলোমের সদৃশ তুষার দেন, তিনি ভস্মের ন্যায় নীহার ছড়াইয়া দেন।
তিনি খণ্ড খণ্ড করিয়া আপন হিমানী পাঠান; তাঁহার শীতের সম্মুখে কে দাঁড়াইতে পারে?
তিনি আপন বাক্য পাঠাইয়া সেই সমস্ত দ্রবীভূত করেন, তিনি আপন বায়ু বহাইলে জল প্রবাহিত হয়।
তৎকালে আমি তাঁহার কাছে কার্যকারী ছিলাম; আমি প্রতিদিন আনন্দময় ছিলাম, তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহ্লাদ করিতাম;
আমি তাঁহার ভূমণ্ডলে আহ্লাদ করিতাম, মনুষ্য-সন্তানগণে আমার আনন্দ হইত।
তিনি জলরাশির উপরে চক্ররেখা লিখিয়াছেন, অন্ধকার ও দীপ্তির মধ্যবর্তী সীমা পর্যন্ত।
গগনমণ্ডলের স্তম্ভ সকল কম্পিত হয়, তাঁহার ভর্ৎসনায় চমকিয়া উঠে।
তিনি আপন পরাক্রমে সমুদ্রকে উত্তেজিত করেন, আপন বুদ্ধিতে গর্বীকে আঘাত করেন।
তাঁহার শ্বাসে আকাশ পরিষ্কার হয়; তাঁহারই হস্ত পলায়মান নাগকে বিদ্ধ করিয়াছে।
দেখ, এই সকল তাহার মার্গের প্রান্ত; তাঁহার বিষয়ে কাকলীমাত্র শুনা যায়; কিন্তু তাঁহার পরাক্রমের গর্জন কে বুঝিতে পারে?
আর কেন্দুয়াব্যাঘ্র মেষশাবকের সহিত একত্র বাস করিবে; চিতাব্যাঘ্র ছাগবৎসের সহিত শয়ন করিবে; গোবৎস, যুবসিংহ ও হৃষ্টপুষ্ট পশু একত্র থাকিবে; এবং ক্ষুদ্র বালক তাহাদিগকে চালাইবে।
ধেনু ও ভল্লুকী চরিবে, তাহাদের বৎস সকল একত্র শয়ন করিবে, এবং সিংহ বলদের ন্যায় বিচালি খাইবে।
আর স্তন্যপায়ী শিশু কেউটিয়া সর্পের গর্তের উপরে খেলা করিবে, ত্যক্তস্তন্য বালক কৃষ্ণসর্পের বিবরের উপরে হস্ত রাখিবে।
সেই সকল আমার পবিত্র পর্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না; কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।
যেন তোমরা আপনাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান হও, কারণ তিনি ভাল-মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য উদিত করেন, এবং ধার্মিক-অধার্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।
তাহা শুনিয়া সকলে এক চিত্তে ঈশ্বরের উদ্দেশে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, হে স্বামিন্, তুমি আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং এই সকলের মধ্যে যাহা কিছু আছে, সমস্তের নির্মাণকর্তা;
কেননা সৃষ্টির ঐকান্তিক প্রতীক্ষা ঈশ্বরের পুত্রগণের প্রকাশ প্রাপ্তির অপেক্ষা করিতেছে।
কেননা খ্রীষ্ট যীশুতে জীবনের আত্মার যে ব্যবস্থা, তাহা আমাকে পাপের ও মৃত্যুর ব্যবস্থা হইতে মুক্ত করিয়াছে।
কারণ সৃষ্টি অসারতার বশীকৃত হইল, স্বেচ্ছায় নয়, কিন্তু যিনি বশ করেন তাহার ইচ্ছায়;
এই প্রত্যাশায় হইল যে, সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।
উচ্চ পর্বত সকল বনচ্ছাগের আবাস, শৈল সকল শাফন পশুর আশ্রয়।
তিনি ঋতুর জন্য চন্দ্র নির্মাণ করিয়াছেন, সূর্য আপন অস্তগমনের সময় জানে।
তুমি বস্ত্রের ন্যায় দীপ্তি পরিধান করিয়াছ, আকাশমণ্ডলকে চন্দ্রাতপের ন্যায় বিস্তার করিয়াছ।
তুমি অন্ধকার করিলে রাত্রি হয়, তখন বনপশু সকল বিহার করে,
যুবসিংহগণ মৃগের চেষ্টায় গর্জন করে, ঈশ্বরের কাছে তাহাদের খাদ্য অন্বেষণ করে।
সূর্য উদিত হইলে তাহারা চলিয়া যায়, আপন আপন গহ্বরে শয়ন করে।
বস্তুতঃ তুমিই আমার মর্ম রচনা করিয়াছ; তুমি মাতৃগর্ভে আমাকে বুনিয়াছিলে।
আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্যরূপে নির্মিত; তোমার কর্ম সকল আশ্চর্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে।
আমার দেহ তোমা হইতে লুক্কায়িত ছিল না, যখন আমি গোপনে নির্মিত হইতেছিলাম, পৃথিবীর অধঃস্থানে শিল্পিত হইতেছিলাম।
হে ইয়োব, আপনি ইহাতে কর্ণপাত করুন, স্থির থাকুন, ঈশ্বরের আশ্চর্য কার্য সকল বিবেচনা করুন।
আপনি কি জানেন, ঈশ্বর কিরূপে এই সকলের উপরে ভার রাখেন, আর আপনি মেঘের দীপ্তি বিরাজমান করেন?
আপনি কি মেঘমালার দোলন জানেন? পরম জ্ঞানীর আশ্চর্য ক্রিয়া সকল জানেন?
তোমার মুক্তিদাতা এবং গর্ভাবধি তোমার গঠনকারী সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি সদাপ্রভু সর্ববস্তু-নির্মাতা, আমি একাকী আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছি, আমি ভূতল বিছাইয়াছি; আমার সঙ্গী কে?
আর প্রান্তনিবাসীরা তোমার চিহ্ন সকল দেখিয়া ভয় পায়; তুমি প্রত্যুষের ও সন্ধ্যাকালের উদয়স্থানকে আনন্দ-গানময় করিয়া থাক।
সকলের চক্ষু তোমার অপেক্ষা করে, তুমিই যথাসময়ে তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিতেছ।
তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।
এক নদী আছে তাহার প্রণালী সকল ঈশ্বরের নগরকে, পরাৎপরের আবাসের পবিত্র স্থানকে আনন্দিত করে।
ঈশ্বর তাহার মধ্যবর্তী, তাহা বিচলিত হইবে না; প্রভাতেই ঈশ্বর তাহার সাহায্য করিবেন।
তিনি আপন ধর্মধাম নির্মাণ করিলেন, উচ্চ শিখরের ন্যায়, পৃথিবীর ন্যায়, যাহা তিনি চিরতরে স্থাপন করিয়াছেন।
সমস্ত ভুবন! তাঁহার সাক্ষাতে কম্পমান হও; জগৎও সুস্থির, তাহা বিচলিত হইবে না।
আকাশমণ্ডল আনন্দ করুক, পৃথিবী উল্লসিত হউক; লোকে জাতিগণের মধ্যে বলুক, সদাপ্রভু রাজত্ব করিতেছেন।
সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সকলে গর্জন করুক, ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রস্থ সকলই উল্লসিত হউক।
তখন বনের বৃক্ষ সকল সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আনন্দে গান করিবে; কেননা তিনি পৃথিবীর বিচার করিতে আসিতেছেন।
সদাপ্রভুর স্তব কর, কেননা তিনি মঙ্গলময়, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী।
সদাপ্রভু ঈশ্বর, যিনি আকাশমণ্ডল সৃষ্টি করিয়াছেন ও তাহা বিস্তার করিয়াছেন, যিনি ভূতল ও তদুৎপন্ন সমস্তই বিছাইয়াছেন, যিনি তন্নিবাসী সকলকে নিশ্বাস দেন, ও তথাকার সমস্ত জঙ্গমকে জীবাত্মা দেন, তিনি এই কথা কহেন, আমি সদাপ্রভু ধর্মশীলতায় তোমাকে আহ্বান করিয়াছি,
পরে আমি “এক নূতন আকাশ ও এক নূতন পৃথিবী” দেখিলাম; কেননা প্রথম আকাশ ও প্রথম পৃথিবী লুপ্ত হইয়াছে; এবং সমুদ্র আর নাই।
পরে “তিনি আত্মাতে আমাকে এক উচ্চ মহাপর্বতে লইয়া গিয়া” পবিত্র নগরী যিরূশালেমকে দেখাইলেন, সে স্বর্গ হইতে, ঈশ্বরের নিকট হইতে,
নামিয়া আসিতেছিল, সে ঈশ্বরের প্রতাপ বিশিষ্ট; তাহার জ্যোতি বহুমূল্য মণির, স্ফটিকবৎ নির্মল সূর্যকান্তমণির তুল্য।
তাহার বৃহৎ ও উচ্চ প্রাচীর আছে, দ্বাদশ পুরদ্বার আছে; সেই সকল দ্বারে দ্বাদশ দূত থাকেন, এবং “কয়েকটি নাম সেইগুলির উপরে লিখিত আছে, সেই সকল ইস্রায়েল-সন্তানদের দ্বাদশ বংশের নাম;
পূর্বদিকে তিন দ্বার, উত্তরদিকে তিন দ্বার, দক্ষিণদিকে তিন দ্বার ও পশ্চিমদিকে তিন দ্বার”।
আর নগরের প্রাচীরের দ্বাদশ ভিত্তিমূল, সেইগুলির উপরে মেষশাবকের দ্বাদশ প্রেরিতের দ্বাদশ নাম আছে।
আর যিনি আমার সঙ্গে আলাপ করিতেছিলেন, তাঁহার হস্তে ঐ নগর ও তাহার দ্বার সকল ও তাহার প্রাচীর “মাপিবার জন্য একটি সুবর্ণ নল” ছিল।
ঐ নগর চতুষ্কোণ, তাহার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সমান। আর তিনি সেই নল দ্বারা নগর মাপিলে দ্বাদশ সহস্র তীর পরিমাণ হইল, তাহার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান।
পরে তাহার প্রাচীর মাপিলে, মনুষ্যের অর্থাৎ দূতের পরিমাণ অনুসারে একশত চুয়াল্লিশ হস্ত হইল।
প্রাচীরের গাঁথনি সূর্যকান্তমণির এবং নগর নির্মল কাচের সদৃশ পরিষ্কৃত সুবর্ণময়।
নগরের প্রাচীরের ভিত্তিমূল সকল সর্ববিধ মূল্যবান মণিতে ভূষিত; প্রথম ভিত্তিমূল সূর্যকান্তের,
আর আমি দেখিলাম, “পবিত্র নগরী, নূতন যিরূশালেম,” স্বর্গ হইতে, ঈশ্বরের নিকট হইতে নামিয়া আসিতেছে; সে আপন বরের নিমিত্ত বিভূষিতা কন্যার ন্যায় প্রস্তুত হইয়াছিল।
তিনি তলভূমিতে প্রবাহ প্রেরণ করিয়া থাকেন; সেই সকল পর্বতগণের মধ্যে ভ্রমণ করে।
সেই সকল মাঠের সমস্ত পশুকে জল দেয়; বনগর্দভেরা তৃষ্ণা নিবারণ করে।
সেই সকলের তীরে আকাশের পক্ষিগণ বাসা করে, ডালের মধ্য হইতে নিজ নিজ রব শুনায়।
সকল বীজের মধ্যে ঐ বীজ অতি ক্ষুদ্র; কিন্তু বাড়িয়া উঠিলে পর তাহা শাক হইতে বড় হয়, এবং এমন বৃক্ষ হইয়া উঠে যে, আকাশের পক্ষিগণ আসিয়া তাহার শাখায় বাস করে।
হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রভু, সমস্ত পৃথিবীতে তোমার নাম কেমন মহিমান্বিত। তুমি আকাশমণ্ডলের ঊর্ধ্বেও তোমার প্রভা সংস্থাপন করিয়াছ।
তুমি শিশু ও দুগ্ধপোষ্যদের মুখ হইতে শক্তির ভিত্তিমূল স্থাপন করিয়াছ, তোমার বৈরিগণ হেতুই করিয়াছ, যেন শত্রু ও বিপক্ষকে ক্ষান্ত কর।
কারণ তাহারা মিথ্যার সহিত ঈশ্বরের সত্য পরিবর্তন করিয়াছে, এবং সৃষ্ট বস্তুর পূজা ও আরাধনা করিয়াছে, কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে নয়, যিনি যুগে যুগে ধন্য। আমেন।
তিনি সমস্ত প্রাণীকে আহার দেন; তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী
স্বর্গের ঈশ্বরের স্তব কর; তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী।
সূর্যও উঠে, আবার সূর্য অস্ত যায় এবং সত্বর স্বস্থানে যায়, সেখানে গিয়া উঠে।
বায়ু দক্ষিণ দিকে যায় ও ঘুরিয়া ঘুরিয়া উত্তর দিকে যায়; নিরন্তর ঘুরিয়া ঘুরিয়া আপন পথে যায়, এবং বায়ু আপন চক্রপথে ফিরিয়া আইসে।
জলস্রোত সকল সমুদ্রে প্রবেশ করে, তথাচ সমুদ্র পূর্ণ হয় না; জলস্রোত সকল যে স্থানে যায়, সেই স্থানে পুনরায় চলিয়া যায়।
জলের উপরে সদাপ্রভুর রব; গৌরবান্বিত ঈশ্বর বজ্রনাদ করিতেছেন, সদাপ্রভু জলরাশির উপরে বিদ্যমান।
সদাপ্রভুর রব শক্তিবিশিষ্ট; সদাপ্রভুর রব প্রতাপান্বিত।
সদাপ্রভু এই কথা কহেন, স্বর্গ আমার সিংহাসন, পৃথিবী আমার পাদপীঠ; তোমরা আমার জন্য কিরূপ গৃহ নির্মাণ করিবে? আমার বিশ্রাম স্থান কোন্ স্থান?
তোমরা যাহারা যিরূশালেমকে ভালবাস, তোমরা সকলে তাহার সহিত আনন্দ কর, তাহার বিষয়ে উল্লাস কর; তোমরা যাহারা তাহার জন্য শোকান্বিত, তোমরা সকলে তাহার সহিত অতিশয় প্রফুল্ল হও;
যেন তোমরা তাহার সান্ত্বনারূপ স্তন চুষিয়া তৃপ্ত হও, যেন তাহাকে দোহন করিয়া তাহার প্রতাপ-বাহুল্যে আমোদিত হও।
কারণ সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তাহার দিকে নদীর ন্যায় শান্তি ও উত্থলিত বন্যার ন্যায় জাতিগণের প্রতাপ বহাইব, তাহাতে তোমরা স্তন্য পান করিবে, কক্ষদেশে করিয়া তোমাদিগকে বহন করা যাইবে, হাঁটুর উপরে নাচান যাইবে।
মাতা যেমন আপন পুত্রকে সান্ত্বনা করে, তেমনি আমি তোমাদিগকে সান্ত্বনা করিব; তোমরা যিরূশালেমে সান্ত্বনা পাইবে।
এই সকল দেখিলে তোমাদের হৃদয় প্রফুল্ল হইবে, তোমাদের অস্থি সকল নবীন তৃণের ন্যায় সতেজ হইবে; এবং সদাপ্রভুর হস্ত আপন দাসদের পক্ষে আত্ম পরিচয় দিবে, আর তিনি আপন শত্রুদের প্রতি কুপিত হইবেন।
কারণ দেখ, সদাপ্রভু অগ্নিসহ আগমন করিবেন, তাঁহার রথ সকল ঘূর্ণবায়ুর ন্যায় হইবে; তিনি মহাতাপে আপন ক্রোধ, প্রজ্বলিত অগ্নি দ্বারা আপন ভর্ৎসনা কার্যে পরিণত করিবেন।
কেননা সদাপ্রভু অগ্নি দ্বারা ও আপন খড়্গ দ্বারা সমস্ত মর্ত্যের সহিত আপনার বিবাদ নিষপন্ন করিবেন; আর সদাপ্রভু কর্তৃক অনেক লোক নিহত হইবে।
যাহারা মধ্যবর্তী এক ব্যক্তির পশ্চাতে পশ্চাতে উদ্যানে [যাইবার জন্য] আপনাদের পবিত্র ও শুচি করে, শূকরের মাংস, ঘৃণ্য দ্রব্য ও মূষিক খায়, তাহারা একসঙ্গে বিনষ্ট হইবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন।
আমিই তাহাদের ক্রিয়া ও কল্পনা সকল [জানি]। [সেই সময়] উপস্থিত, যখন আমি সর্বজাতীয় ও সর্বভাষাবাদী লোককে সংগ্রহ করিব; তাহারা আসিয়া আমার প্রতাপ দর্শন করিবে।
আর আমি তাহাদের মধ্যে এক চিহ্ন স্থাপন করিব; এবং তাহাদের মধ্য হইতে উত্তীর্ণ লোকদিগকে জাতিগণের কাছে, তর্শীশ, পূল ও ধনুর্ধর লূদ, এবং তূবল ও যবনের কাছে, যে দূরস্থ উপকূল সমূহ কখনও আমার খ্যাতি শুনে নাই ও আমার প্রতাপ দেখে নাই, তাহাদের কাছে প্রেরণ করিব; এবং তাহারা জাতিগণের মধ্যে আমার প্রতাপ জ্ঞাত করিবে।
এ সকলই ত আমার হস্ত দ্বারা নির্মিত, তাই এই সকল উৎপন্ন হইল, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু এই ব্যক্তির প্রতি, অর্থাৎ যে দুঃখী, ভগ্নাত্মা ও আমার বাক্যে কম্পমান, তাহার প্রতি আমি দৃষ্টিপাত করিব।
হে সদাপ্রভু, তোমার নির্মিত বস্তু কেমন বহুবিধ! তুমি প্রজ্ঞা দ্বারা সেই সমস্ত নির্মাণ করিয়াছ; পৃথিবী তোমার সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ।
তিনি নদী সকলকে প্রান্তরে, জলের উনুই সমূহকে শুষ্ক ভূমিতে পরিণত করেন,
তিনি ফলবান দেশকে লবণ-প্রান্তর করেন, তথাকার নিবাসীদের কদাচরণ প্রযুক্ত।
বস্তুতঃ সেই লোকেরা ইচ্ছাপূর্বক ইহা ভুলিয়া যায় যে, আকাশমণ্ডল, এবং জল হইতে ও জল দ্বারা স্থিতিপ্রাপ্ত পৃথিবী ঈশ্বরের বাক্যের গুণে প্রাক্কালে ছিল;
বাস্তবিক ঈশ্বরের সৃষ্ট সমস্ত বস্তুই ভাল; ধন্যবাদ সহকারে গ্রহণ করিলে কিছুই অগ্রাহ্য নয়,
কেননা ঈশ্বরের বাক্য এবং প্রার্থনা দ্বারা তাহা পবিত্রীকৃত হয়।
হে সদাপ্রভু, তোমার আকাশমণ্ডল নোয়াইয়া নামিয়া আইস; পর্বতগণকে স্পর্শ কর, তাহারা ধূমাইবে।
বিদ্যুৎ নিক্ষেপ কর, উহাদিগকে ছিন্নভিন্ন কর, তোমার বাণ ছাড়, উহাদিগকে সংহার কর।
আর তিনি আমাকে “জীবন-জলের নদী” দেখাইলেন, তাহা স্ফটিকের ন্যায় উজ্জ্বল, তাহা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সিংহাসন হইতে নির্গত হইয়া তথাকার চকের মধ্যস্থানে বহিতেছে;
আর তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি এই গ্রন্থের ভাববাণীর বচন সকল মুদ্রাঙ্কিত করিও না; কেননা সময় সন্নিকট।
যে অধর্মচারী, সে ইহার পরেও অধর্মাচরণ করুক; এবং যে কলুষিত, সে ইহার পরেও কলুষিত হউক; এবং যে ধার্মিক, সে ইহার পরেও ধর্মাচরণ করুক; এবং যে পবিত্র, সে ইহার পরেও পবিত্রীকৃত হউক।
“দেখ, আমি শীঘ্র আসিতেছি; এবং আমার দাতব্য পুরস্কার আমার সহবর্তী, যাহার যেমন কার্য, তাহাকে তেমন ফল দিব।
আমি আল্ফা এবং ওমিগা, প্রথম ও শেষ,” আদি এবং অন্ত।
ধন্য তাহারা, যাহারা আপন আপন পরিচ্ছদ ধৌত করে, যেন তাহারা জীবন-বৃক্ষের অধিকারী হয়, এবং দ্বার সকল দিয়া নগরে প্রবেশ করে।
বাহিরে রহিয়াছে কুকুরগণ, মায়াবিগণ, বেশ্যাগামীরা, নরঘাতকেরা ও প্রতিমাপূজকেরা, এবং যে কেহ মিথ্যা কথা ভালবাসে ও রচনা করে।
আমি যীশু আপন দূতকে পাঠাইলাম, যেন সে মণ্ডলীগণের নিমিত্ত তোমাদের কাছে এই সকল সাক্ষ্য দেয়। আমি দায়ূদের মূল ও বংশ, উজ্জ্বল প্রভাতীয় নক্ষত্র।
আর আত্মা ও কন্যা কহিতেছেন, আইস। যে শুনে, সেও বলুক, আইস। আর যে পিপাসিত, সে আইসুক; যে ইচ্ছা করে, সে বিনামূল্যেই জীবন-জল গ্রহণ করুক।
যাহারা এই গ্রন্থের ভাববাণীর বচন সকল শুনে, তাহাদের প্রত্যেক জনের কাছে আমি সাক্ষ্য দিয়া বলিতেছি, যদি কেহ ইহার সহিত আর কিছু যোগ করে, তবে ঈশ্বর সেই ব্যক্তিতে এই গ্রন্থে লিখিত আঘাত সকল যোগ করিবেন;
আর যদি কেহ এই ভাববাণী-গ্রন্থের বচন হইতে কিছু হরণ করে, তবে ঈশ্বর এই গ্রন্থে লিখিত জীবন-বৃক্ষ হইতে ও পবিত্র নগর হইতে তাহার অংশ হরণ করিবেন।
“নদীর এপারে ওপারে জীবন-বৃক্ষ আছে, তাহা দ্বাদশ বার ফল উৎপন্ন করে, এক এক মাসে আপন আপন ফল দেয়, এবং সেই বৃক্ষের পত্র জাতিগণের আরোগ্যনিমিত্তক”;
পৃথিবীর রাজগণ ও সমস্ত জাতি; লোকপালগণ ও পৃথিবীর সকল বিচারকর্তা;
যুবকগণ ও যুবতী সকল; বৃদ্ধগণ ও বালক-বালিকাসমূহ;
সকলে সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা করুক, কেননা কেবল তাঁহারই নাম উন্নত, তাঁহার প্রভা পৃথিবীর ও স্বর্গের উপরিস্থ।
যেন সিয়োনের শোকার্ত লোকদিগকে বর দিই, যেন তাহাদিগকে ভস্মের পরিবর্তে শিরোভূষণ, শোকের পরিবর্তে আনন্দতৈল, অবসন্ন আত্মার পরিবর্তে প্রশংসারূপ পরিচ্ছদ দান করি; তাই তাহারা ধার্মিকতা-বৃক্ষ ও সদাপ্রভুর রোপিত তাঁহার ভূষণার্থক উদ্যান বলিয়া আখ্যাত হইবে।
সদাপ্রভুর সমস্ত নির্মিত বস্তু! তাঁহার ধন্যবাদ কর, তাঁহার অধিকারের সমস্ত স্থানে। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর।
হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে অনুসন্ধান করিয়াছ, আমাকে জ্ঞাত হইয়াছ।
সেখানেও তোমার হস্ত আমাকে চালাইবে, তোমার দক্ষিণ হস্ত আমাকে ধরিবে।
যদি বলি, ‘আঁধার আমাকে ঢাকিয়া ফেলিবে, আমার চারিদিকে আলোক রাত্রি হইবে’,
বাস্তবিক অন্ধকারও তোমা হইতে গুপ্ত রাখে না, বরং রাত্রি দিনের ন্যায় আলো দেয়; অন্ধকার ও আলোক উভয়ই সমান।
বস্তুতঃ তুমিই আমার মর্ম রচনা করিয়াছ; তুমি মাতৃগর্ভে আমাকে বুনিয়াছিলে।
আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্যরূপে নির্মিত; তোমার কর্ম সকল আশ্চর্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে।
আমার দেহ তোমা হইতে লুক্কায়িত ছিল না, যখন আমি গোপনে নির্মিত হইতেছিলাম, পৃথিবীর অধঃস্থানে শিল্পিত হইতেছিলাম।
তোমার চক্ষু আমাকে পিণ্ডাকার দেখিয়াছে, তোমার পুস্তকে সমস্তই লিখিত ছিল, যাহা দিন দিন গঠিত হইতেছিল, যখন সেই সকলের একটিও ছিল না।
হে ঈশ্বর, আমার পক্ষে তোমার সঙ্কল্প সকল কেমন মূল্যবান। তাহার সমষ্টি কেমন অধিক!
গণনা করিলে তাহা বালুকা অপেক্ষা বহুসংখ্যক হয়; আমি যখন জাগিয়া উঠি, তখনও তোমার নিকটে থাকি।
হে ঈশ্বর, তুমি নিশ্চয়ই দুষ্টকে বধ করিবে; হে রক্তপাতীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও।
তুমিই আমার উপবেশন ও আমার উত্থান জানিতেছ, তুমি দূর হইতে আমার সঙ্কল্প বুঝিতেছ।
তাহারা দুষ্টভাবে তোমার নাম উচ্চারণ করে; তোমার শত্রুগণ তাহা অনর্থক লয়।
হে সদাপ্রভু, যাহারা তোমাকে দ্বেষ করে, আমি কি তাহাদিগকে দ্বেষ করি না? যাহারা তোমার বিরুদ্ধে উঠে, তাহাদের প্রতি কি বিরক্ত হই না?
আমি যার পর নাই দ্বেষে তাহাদিগকে দ্বেষ করি; তাহাদিগকে আমারই শত্রু মনে করি।
হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও; আমার পরীক্ষা কর, আমার চিন্তা সকল জ্ঞাত হও;
আর দেখ, আমাতে দুষ্টতার পথ পাওয়া যায় কি না, এবং সনাতন পথে আমাকে গমন করাও।
তুমি আমার পথ ও আমার শয়ন তদন্ত করিতেছ, আমার সমস্ত পথ ভালরূপে জান।
আর তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ কর, যেহেতু দুঃসময় আসিতেছে, এবং সেই বৎসর সকল সন্নিকট হইতেছে, যখন তুমি বলিবে, ইহাতে আমার প্রীতি নাই।
দেখ, স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ এবং পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থ যাবতীয় বস্তু তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর।
কেন্দুয়াব্যাঘ্র ও মেষশাবক একত্র চরিবে, সিংহ বলদের ন্যায় বিচালি খাইবে; আর ধূলিই সর্পের খাদ্য হইবে। তাহারা আমার পবিত্র পর্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন।
আর তিনি আপন প্রজাদের জন্য এক শৃঙ্গ উত্তোলন করিয়াছেন, তাহা প্রশংসা-ভূমি, তাঁহার সমস্ত সাধুর নিমিত্ত, ইস্রায়েল-সন্তানদের নিমিত্ত, যাহারা তাঁহার নিকটস্থ প্রজা। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর।
তাহারা মনে মনে বলে না, আইস, আমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করি; তিনিই উপযুক্তকালে প্রথম ও শেষ বর্ষার জল দেন; আমাদের জন্য ফসল কাটিবার নিয়মিত সপ্তাহ সকল রক্ষা করেন।
তোমার চক্ষু আমাকে পিণ্ডাকার দেখিয়াছে, তোমার পুস্তকে সমস্তই লিখিত ছিল, যাহা দিন দিন গঠিত হইতেছিল, যখন সেই সকলের একটিও ছিল না।
হে ঈশ্বর, আমার পক্ষে তোমার সঙ্কল্প সকল কেমন মূল্যবান। তাহার সমষ্টি কেমন অধিক!
তাহাদের মানরজ্জু সমস্ত পৃথিবীতে ব্যাপ্ত, তাহাদের বাক্য জগতের সীমা পর্যন্ত ব্যাপ্ত; তাহাদের মধ্যে তিনি সূর্যের নিমিত্ত এক তাম্বু স্থাপন করিয়াছেন।
সে বরের ন্যায় আপন বাসরগৃহ হইতে নির্গত হয়, বীরের ন্যায় স্বীয় পথে দৌড়াইবার জন্য আমোদ করে।
কারণ আমার মীমাংসা এই, আমাদের প্রতি যে প্রতাপ প্রকাশিত হইবে, তাহার সঙ্গে এই বর্তমান কালের দুঃখভোগ তুলনার যোগ্য নয়।
কেননা সৃষ্টির ঐকান্তিক প্রতীক্ষা ঈশ্বরের পুত্রগণের প্রকাশ প্রাপ্তির অপেক্ষা করিতেছে।
প্রান্তর ও জলশূন্য স্থান আমোদ করিবে, মরুভূমি উল্লসিত হইবে, গোলাপের ন্যায় উৎফুল্ল হইবে।
আর সদাপ্রভুর নিস্তারিত লোকেরা ফিরিয়া আসিবে, আনন্দগান পূর্বক সিয়োনে আসিবে, এবং তাহাদের মস্তকে নিত্যস্থায়ী হর্ষমুকুট থাকিবে; তাহারা আমোদ ও আনন্দ প্রাপ্ত হইবে, এবং খেদ ও আর্তস্বর দূরে পলায়ন করিবে।
সে পুষ্পবাহুল্যে উৎফুল্ল হইবে, আর আনন্দ ও গান সহকারে উল্লাস করিবে; তাহাকে দত্ত হইবে লিবানোনের প্রতাপ, কর্মিলের ও শারোণের শোভা; তাহারা দেখিতে পাইবে সদাপ্রভুর প্রতাপ, আমাদের ঈশ্বরের শোভা।
ঐ যে সমুদ্র, বৃহৎ ও চারিদিকে বিস্তীর্ণ, তথায় জঙ্গমেরা থাকে, তাহারা অগণ্য; ক্ষুদ্র ও প্রকাণ্ড কত জীবজন্তু থাকে।
তথায় পোতরাজি বিহার করে, তথায় সেই লিবিয়াথন থাকে, যাহা তুমি তথায় লীলা করিবার জন্য নির্মাণ করিয়াছ।
কারণ সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তাহার দিকে নদীর ন্যায় শান্তি ও উত্থলিত বন্যার ন্যায় জাতিগণের প্রতাপ বহাইব, তাহাতে তোমরা স্তন্য পান করিবে, কক্ষদেশে করিয়া তোমাদিগকে বহন করা যাইবে, হাঁটুর উপরে নাচান যাইবে।
মাতা যেমন আপন পুত্রকে সান্ত্বনা করে, তেমনি আমি তোমাদিগকে সান্ত্বনা করিব; তোমরা যিরূশালেমে সান্ত্বনা পাইবে।
তুমি কি সিংহীর জন্য শিকার অন্বেষণ করিবে? সিংহশাবকদের ক্ষুধা কি নিবৃত্ত করিবে,
যখন আমি পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, তখন তুমি কোথায় ছিলে? যদি তোমার বুদ্ধি থাকে তবে বল,
যখন তাহারা গুহামধ্যে শয়ন করে, গুপ্ত স্থানে বসিয়া মৃগের অপেক্ষায় থাকে?
কে দাঁড়কাককে আহার যোগাইয়া দেয়, যখন তাহার শাবকগণ ঈশ্বরের নিকটে আর্তরব করে, ও খাদ্যের অভাবে ভ্রমণ করে?
সদাপ্রভুর কাছে আমি একটি বিষয় যাচ্ঞা করিয়াছি, তাহারই অন্বেষণ করিব, যেন জীবনের সমুদয় দিন সদাপ্রভুর গৃহে বাস করি, সদাপ্রভুর সৌন্দর্য দেখিবার ও তাঁহার মন্দিরে অনুসন্ধান করিবার জন্য।
ইহা ভাবী বংশের নিমিত্ত লিখিত হইবে; এবং যে জাতি সৃষ্ট হইবে, তাহারা সদাপ্রভুর প্রশংসা করিবে।
কেননা তিনি আপন উচ্চ ধর্মধাম হইতে অবলোকন করিলেন; সদাপ্রভু স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে দৃষ্টিপাত করিলেন;
সঙ্কটের দিনে আমা হইতে মুখ লুকাইও না, আমার দিকে কর্ণপাত কর; যে দিন আমি ডাকি, ত্বরায় আমাকে উত্তর দিও।
বন্দির হাহাকার শুনিবার জন্য, মৃত্যুর সন্তানদিগকে মুক্ত করিবার জন্য;
যেন প্রচারিত হয় সিয়োনে সদাপ্রভুর নাম, ও যিরূশালেমে তাঁহার প্রশংসা;
যৎকালে জাতিগণ একত্র মিলিবে, ও রাজ্য সকল মিলিবে, সদাপ্রভুর সেবা করিবার জন্য।
হে আমাদের ত্রাণেশ্বর, তুমি ধার্মিকতায় ভয়ানক ক্রিয়া দ্বারা আমাদিগকে উত্তর দিবে; তুমি পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তের, এবং দূরবর্তী সমুদ্রবাসীদের বিশ্বাস-ভূমি।
তুমি নিজ শক্তিতে পর্বতগণের স্থাপনকর্তা; তুমি পরাক্রমে বদ্ধকটি।
তুমি সমুদ্রের গর্জন, তাহার তরঙ্গের গর্জন, ও জাতিগণের কোলাহল শান্ত করিয়া থাক।
আকাশমণ্ডল তোমার, পৃথিবীও তোমার; জগৎ ও তাহার সমস্ত বস্তু তোমারই সংস্থাপিত।
তুমিই উত্তর ও দক্ষিণ দিকের সৃষ্টি করিয়াছ; তাবোর ও হর্মোণ তোমার নামে আনন্দধ্বনি করে।
আর, “হে প্রভু, তুমিই আদিতে পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করিয়াছ, আকাশমণ্ডলও তোমার হস্তের রচনা।
তিনি প্রান্তরকে জলাশয়ে, মরুভূমিকে জলের উনুই সমূহে পরিণত করেন;
আর সেখানে তিনি ক্ষুধিত লোকদিগকে বাস করান, যেন তাহারা বসতি-নগর প্রস্তুত করে,
এবং ক্ষেত্রে বীজ বপন ও দ্রাক্ষালতা রোপণ করে, এবং উৎপন্ন ফল সঞ্চয় করে।
তিনি তাহাদিগকে আশীর্বাদ করেন, তাই তাহারা অতিশয় বৃদ্ধি পায়, এবং তিনি তাহাদের পশুগণকে হ্রাস পাইতে দেন না।
তুমি কি হিমানী-ভাণ্ডারে প্রবেশ করিয়াছ, সেই করকা-ভাণ্ডার কি তুমি দেখিয়াছ,
যাহা আমি সঙ্কটকালের জন্য রাখিয়াছি, সংগ্রাম ও যুদ্ধ দিনের জন্য রাখিয়াছি?
তুমি অন্ধকার করিলে রাত্রি হয়, তখন বনপশু সকল বিহার করে,
যুবসিংহগণ মৃগের চেষ্টায় গর্জন করে, ঈশ্বরের কাছে তাহাদের খাদ্য অন্বেষণ করে।
সূর্য উদিত হইলে তাহারা চলিয়া যায়, আপন আপন গহ্বরে শয়ন করে।
মনুষ্য আপন কার্যে বাহির হয়, আর সায়ংকাল পর্যন্ত শ্রম করে।
সমস্ত পৃথিবী সদাপ্রভুকে ভয় করুক; জগন্নিবাসী সকলে তাঁহা হইতে ভীত হউক।
তিনি কথা কহিলেন, আর উৎপত্তি হইল, তিনি আজ্ঞা করিলেন, আর স্থিতি হইল।
আর যিনি যুগপর্যায়ের যুগে যুগে জীবন্ত, যিনি আকাশ ও তন্মধ্যস্থ বস্তু সকলের এবং পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থ বস্তু সকলের এবং সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ বস্তু সকলের সৃষ্টি করিয়াছিলেন, তাঁহার নামে এই শপথ করিলেন”, আর বিলম্ব হইবে না;
সমস্ত পৃথিবী! ঈশ্বরের উদ্দেশে আনন্দধ্বনি কর।
কেননা, হে ঈশ্বর, তুমি আমাদের পরীক্ষা করিয়াছ, রৌপ্য পোড় দিবার ন্যায় আমাদিগকে পোড় দিয়াছ;
তুমি আমাদিগকে জালে ফেলিয়াছ, আমাদের কটিদেশ ভারগ্রস্ত করিয়াছ।
তুমি আমাদের মস্তকের উপর দিয়া অশ্বারোহী মনুষ্যদিগকে চালাইয়াছ; আমরা অগ্নি ও জলমধ্য দিয়া গমন করিয়াছি; তথাপি তুমি আমাদিগকে সমৃদ্ধি-স্থানে আনিয়াছ।
আমি হোমবলি লইয়া তোমার গৃহে প্রবেশ করিব, তোমার উদ্দেশে আমার সেই মানত সকল পূর্ণ করিব,
যাহা আমার ওষ্ঠাধর উচ্চারণ করিয়াছে, যাহা সঙ্কটের সময়ে আমার মুখ বলিয়াছে।
আমি তোমার উদ্দেশে মেদযুক্ত হোমবলি উৎসর্গ করিব, তাহার সহিত মেষরূপ ধূপদাহ করিব; ছাগদের সহিত বৃষদিগকেও বলিদান করিব। [সেলা]
হে ঈশ্বর-ভীত লোক সকলে, তোমরা আসিয়া শ্রবণ কর; আমার প্রাণের জন্য তিনি যাহা করিয়াছেন, তাহার বর্ণনা করি।
আমি নিজ মুখে তাঁহাকে ডাকিলাম, তাঁহার প্রতিষ্ঠা আমার জিহ্বাগ্রে ছিল।
যদি চিত্তে অধর্মের প্রতি তাকাইতাম, তবে প্রভু শুনিতেন না।
কিন্তু সত্যই ঈশ্বর শুনিয়াছেন; তিনি আমার প্রার্থনার রবে অবধান করিয়াছেন।
তাঁহার নামের গৌরব কীর্তন কর, তাঁহার প্রশংসা গৌরবান্বিত কর।
দুইটি চড়াই পাখী কি এক পয়সায় বিক্রয় হয় না? আর তোমাদের পিতার অনুমতি বিনা তাহাদের একটিও ভূমিতে পড়ে না।
ফিলিপ ও বর্থলময়, থোমা ও করগ্রাহী মথি, আল্ফেয়ের পুত্র যাকোব ও থদ্দেয়,
কিন্তু তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে।
অতএব ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ।
জাতিগণের অসার দেবতাদের মধ্যে বৃষ্টি দিতে পারে, এমন কেহ কি আছে? কিম্বা আকাশ কি জল বর্ষণ করিতে পারে? হে সদাপ্রভু, আমাদের ঈশ্বর, তুমিই কি সেই [বৃষ্টিদাতা] নহ? এই জন্য আমরা তোমার অপেক্ষায় থাকিব, কেননা তুমিই এই সমস্ত করিয়া থাক।
ধার্মিকগণের তাম্বুতে আনন্দের ও পরিত্রাণের ধ্বনি হইতেছে; সদাপ্রভুর দক্ষিণ হস্ত বিক্রমসাধক।
সদাপ্রভুর দক্ষিণ হস্ত উন্নত, সদাপ্রভুর দক্ষিণ হস্ত বিক্রমসাধক।