২ রাজাবলি 6 - বাংলা সমকালীন সংস্করণকুড়ুলের ফলা ভেসে ওঠে 1 ভাববাদী সম্প্রদায়ের লোকেরা ইলীশায়কে বললেন, “দেখুন, আপনার সাথে আমরা যেখানে দেখা করি, সেই স্থানটি আমাদের জন্য খুবই ছোটো। 2 আমাদের জর্ডন নদীর পাড়ে যেতে দিন, যেন সেখান থেকে আমরা প্রত্যেকে এক-একটি খুঁটি নিয়ে আসতে পারি; এবং সেখানে আমাদের জন্য দেখাসাক্ষাৎ করার একটি স্থান তৈরি করা যাক।” তিনি বললেন, “যাও।” 3 তখন তাদের মধ্যে একজন বললেন, “আপনিও কি দয়া করে আপনার এই দাসেদের সাথে আসবেন না?” “আমিও আসব,” ইলীশায় উত্তর দিলেন। 4 আর তিনি তাদের সাথে গেলেন। তারা জর্ডন নদীর পাড়ে গেলেন ও গাছ কাটতে শুরু করলেন। 5 তাদের মধ্যে একজন যখন একটি গাছ কাটছিলেন, কুড়ুলের লোহার ফলাটি জলে পড়ে গেল। “না! না! হে আমার প্রভু!” তিনি চিৎকার করে উঠেছিলেন। “সেটি যে আমি ধার করে এনেছিলাম!” 6 ঈশ্বরের লোক জিজ্ঞাসা করলেন, “সেটি কোথায় পড়েছে?” তিনি যখন তাঁকে সেই স্থানটি দেখিয়ে দিলেন, ইলীশায় তখন গাছের একটি সরু ডাল ভেঙে নিয়ে সেটি জলে ফেলে দিলেন, ও লোহার ফলাটি ভাসিয়ে তুলেছিলেন। 7 “ফলাটি তুলে আনো,” তিনি বললেন। তখন সেই লোকটি হাত বাড়িয়ে সেটি তুলে এনেছিলেন। ইলীশায় অন্ধ অরামীয়দের ফাঁদে ফেলেন 8 ইত্যবসরে অরামের রাজা ইস্রায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করার পর তিনি বললেন, “এসব স্থানে আমি সৈন্যশিবির করব।” 9 ঈশ্বরের লোক ইস্রায়েলের রাজার কাছে খবর দিয়ে পাঠালেন: “সেই স্থানটি পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সাবধান, কারণ অরামীয়রা সেখানে যাচ্ছে।” 10 তাই ঈশ্বরের লোক যে স্থানটির বিষয়ে ইঙ্গিত দিলেন, ইস্রায়েলের রাজা সেটি যাচাই করে নিয়েছিলেন। বারবার ইলীশায় রাজাকে সাবধান করে দিলেন, যেন তিনি এসব স্থানে সতর্ক পাহারা বসিয়ে রাখতে পারেন। 11 এতে অরামের রাজা খুব রেগে গেলেন। তিনি তাঁর কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠিয়ে তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, “আমায় বলো দেখি! আমাদের মধ্যে কে ইস্রায়েলের রাজার পক্ষে গিয়েছে?” 12 “হে আমার প্রভু মহারাজ, আমাদের মধ্যে কেউই যায়নি,” তাঁর কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন বলে উঠেছিল, “কিন্তু ইস্রায়েলে যে ভাববাদী আছেন, সেই ইলীশায় আপনি শোবার ঘরে যা যা বলেন, তার এক-একটি কথা ইস্রায়েলের রাজাকে বলে দেন।” 13 “যাও, গিয়ে খুঁজে বের করো, সে কোথায় আছে,” রাজা আদেশ দিলেন, “যেন আমি লোক পাঠিয়ে তাকে বন্দি করতে পারি।” খবর এসেছিল: “তিনি দোথনে আছেন।” 14 রাজা তখন ঘোড়া, রথ ও বেশ বড়সড় এক সৈন্যদল সেখানে পাঠালেন। রাতের অন্ধকারে তারা গিয়ে নগরটি ঘিরে ফেলেছিল। 15 পরদিন সকালে ঈশ্বরের লোকের দাস যখন ঘুম থেকে উঠে বাইরে গেল, তখন দেখা গেল একদল সৈন্য, ঘোড়া ও রথ নিয়ে নগরটি ঘিরে ফেলেছে। “না! না! হে আমার প্রভু! আমরা কী করব?” সেই দাস জিজ্ঞাসা করল। 16 “ভয় পেয়ো না,” ভাববাদী উত্তর দিলেন। “যারা আমাদের সাথে আছেন, তাদের সংখ্যা, ওদের সাথে যারা আছে, তাদের চেয়ে অনেক বেশি।” 17 আর ইলীশায় প্রার্থনা করলেন, “হে সদাপ্রভু, এর চোখ খুলে দাও, যেন এ দেখতে পারে।” তখন সদাপ্রভু সেই দাসের চোখ খুলে দিলেন, এবং সে তাকিয়ে দেখেছিল ইলীশায়ের চারপাশের পাহাড়গুলি ঘোড়া ও রথে ছেয়ে আছে। 18 শত্রুরা যখন ইলীশায়ের দিকে এগিয়ে এসেছিল, তিনি তখন সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন, “এই সৈন্যদলকে তুমি অন্ধ করে দাও।” তাই ইলীশায়ের প্রার্থনানুসারে সদাপ্রভু তাদের আঘাত করে দৃষ্টিশক্তিহীন করে দিলেন। 19 ইলীশায় তাদের বললেন, “এ সেই পথ নয় ও এ সেই নগরও নয়। আমাকে অনুসরণ করো, আমি তোমাদের পথ দেখিয়ে তোমরা যার খোঁজ করছ, সেই লোকটির কাছে নিয়ে যাব।” আর তিনি পথ দেখিয়ে তাদের শমরিয়ায় নিয়ে গেলেন। 20 তারা নগরে প্রবেশ করার পর ইলীশায় বললেন, “হে সদাপ্রভু, এদের চোখ খুলে দাও, যেন এরা দেখতে পারে।” তখন সদাপ্রভু তাদের চোখ খুলে দিলেন ও তারা তাকিয়ে দেখেছিল, শমরিয়ার মাঝখানে তারা দাঁড়িয়ে আছে। 21 ইস্রায়েলের রাজা তাদের দেখতে পেয়ে ইলীশায়কে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আমার প্রভু, আমি কি এদের মেরে ফেলব? আমি কি এদের মেরে ফেলব?” 22 “এদের মেরে ফেলো না,” তিনি উত্তর দিলেন। “নিজের তরোয়াল বা ধনুক দিয়ে তুমি যাদের বন্দি করেছ, তাদের কি তুমি হত্যা করবে? তাদের সামনে খাবার ও জল রাখো, যেন তারা ভোজনপান করে তাদের মনিবের কাছে ফিরে যেতে পারে।” 23 তাই রাজা তাদের জন্য এক মহাভোজের ব্যবস্থা করলেন, এবং তারা ভোজনপান করার পর তাদের মনিবের কাছে ফিরে গেল। অতএব অরামের সৈন্যদল ইস্রায়েলী এলাকায় হামলা চালানো বন্ধ করে দিয়েছিল। অবরুদ্ধ শমরিয়ায় দুর্ভিক্ষ নেমে আসে 24 কিছুকাল পরে, অরামের রাজা বিন্হদদ তাঁর সমগ্র সৈন্যদল সমাবেশিত করে শমরিয়া অবরোধ করলেন। 25 নগরে ভীষণ দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছিল; এত দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধ চলছিল যে এক-একটি গাধার মুণ্ডু বিক্রি হচ্ছিল আশি শেকল রুপো দিয়ে, এবং এক কাবের চার ভাগের এক ভাগ রেশমগুটির বীজ বিক্রি হচ্ছিল পাঁচ শেকল রুপো দিয়ে। 26 ইস্রায়েলের রাজা যখন প্রাচীরের উপর দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন একজন মহিলা চিৎকার করে তাঁকে বলল, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আমায় সাহায্য করুন!” 27 রাজামশাই উত্তর দিলেন, “সদাপ্রভু যদি তোমায় সাহায্য না করলেন, তবে আমি কোথা থেকে তোমায় সাহায্য করব? খামার থেকে? দ্রাক্ষাপেষাই কল থেকে?” 28 পরে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী হয়েছে?” সে উত্তর দিয়েছিল, “এই মহিলাটি আমায় বলল, ‘তোমার ছেলেকে দাও, যেন আজ আমরা ওকে খেতে পারি, আর আগামীকাল আমরা আমার ছেলেকে খাব।’ 29 তাই আমরা আমার ছেলেকে রান্না করে খেয়েছিলাম। পরদিন আমি তাকে বললাম, ‘এবার তোমার ছেলেকে দাও, যেন আমরা তাকে খেতে পারি,’ কিন্তু সে তাকে লুকিয়ে রেখেছে।” 30 রাজা যখন সেই মহিলাটির কথা শুনেছিলেন, তখন তিনি তাঁর রাজবস্ত্র ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। তিনি যখন প্রাচীরে হাঁটছিলেন, লোকজন তাকিয়ে দেখছিল, ও তারা দেখতে পেয়েছিল যে রাজার রাজবস্ত্রের নিচে তিনি গায়ে চট বেঁধে রেখেছেন। 31 রাজা বললেন, “আজ যদি শাফটের ছেলে ইলীশায়ের মুণ্ডু তার কাঁধের উপর স্বস্থানে থেকে যায়, তবে যেন ঈশ্বর আমাকে কঠোর থেকে কঠোরতর দণ্ড দেন!” 32 ইত্যবসরে ইলীশায় তাঁর বাড়িতে বসেছিলেন, এবং প্রাচীনেরাও তাঁর সাথে বসেছিলেন। রাজামশাই ইতিমধ্যে একজন দূত পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু সে এসে পৌঁছানোর আগেই ইলীশায় সেই প্রাচীনদের বলে দিলেন, “আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না এই হত্যাকারী আমার মুণ্ডু কেটে ফেলার জন্য একজনকে পাঠাচ্ছে? দেখুন, সেই দূত যখন আসবে, আপনারা দরজাটি বন্ধ করে দেবেন এবং তাকে ঢুকতে দেবেন না। তার পিছু পিছু, তার মনিবের পায়ের শব্দও কি শোনা যাচ্ছে না?” 33 তাদের সাথে তখনও তিনি কথা বলছেন, এমন সময় সেই দূত তাঁর কাছে চলে এসেছিল। রাজামশাই বললেন, “এই বিপর্যয় তো সদাপ্রভুর কাছ থেকেই এসেছে। তবে আমি আর কেন সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাকব?” |
পবিত্র বাইবেল, বাংলা সমকালীন সংস্করণ™
সর্বস্বত্ব © 2007, 2017, 2019 Biblica, Inc.
অনুমতি সহ ব্যবহৃত। বিশ্বব্যাপী সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
The Holy Bible, Bengali Contemporary Version™
Copyright © 2007, 2017, 2019 by Biblica, Inc.
Used with permission. All rights reserved worldwide.
Biblica, Inc.