ভূমিকা
খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে বহু যিহূদাবাসী নির্বাসন থেকে ইস্রায়েলের দক্ষিণ রাজ্যে ফিরে আসছিল। সেই সময় তারা প্রচণ্ড অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল: তাদের রাজধানী ও মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত, বিদেশিরা সেখানে বসবাসরত এবং তাদের নিজেদের রাজার শাসন সেখানে আর ছিল না। কিন্তু বংশাবলি, ইষ্রা ও নহিমিয় পুস্তকগুলিতে বারবার বলা হয়েছে যে, এত কিছুর পরেও ঈশ্বরের মনোনীত জাতি তাঁর উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে সক্ষম। তবে এর জন্য তাদের অবশ্যই জেরুশালেমের নবনির্মিত মন্দিরে ঈশ্বরের আরাধনাকে কেন্দ্র করা এক অনন্য সমাজকে গড়ে তুলতে হবে। (উপরোক্ত পুস্তকগুলি প্রকৃতপক্ষে একটিমাত্র দীর্ঘ পুস্তক, যা একটানা একটি কাহিনিকে বলে গেছে; এর একটা উদাহরণ, 2 বংশাবলির সমাপ্তি ও ইষ্রা পুস্তকের সূচনার মিল।)
পুস্তকটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ইস্রায়েলের ইতিহাস বর্ণনা করেছে, যার শুরু এক সুদীর্ঘ বংশতালিকা বা পূর্বপুরুষদের তালিকা দিয়ে। একেবারে আদম অবধি পিছিয়ে গিয়ে এই তালিকা আশপাশের জাতিগুলির মধ্যে ইস্রায়েল জাতির বিশেষ অবস্থানের কথা তুলে ধরেছে এবং তাদের প্রতি ঈশ্বরের বিশেষ আহ্বানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এখানে দাউদের রাজকীয় বংশের পূর্বপুরুষ যিহূদা এবং মন্দিরের যাজক ও পরিচর্যাকারীদের পূর্বপুরুষ লেবির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
এর দ্বিতীয় মূল গুরুত্বপূর্ণ অংশ, নির্বাসনের আগে পর্যন্ত জেরুশালেমের শাসক রাজাদের বর্ণনা। অন্যদের তুলনায় দাউদ এখানে বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন, কিন্তু তাঁর জীবনের যেসব খুঁটিনাটি বিবরণ অন্যত্র রয়েছে সেগুলিকে এখানে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁর সামরিক অভিযানগুলি ও জেরুশালেমের মন্দির নির্মাণের ব্যাপারে তাঁর বিস্তারিত পরিকল্পনার উপরে এখানে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এর কারণটি স্পষ্ট হয়, যখন আমরা দেখি, দাউদকে মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় না কারণ তিনি ছিলেন একজন যোদ্ধা। ঈশ্বর চেয়েছিলেন, শান্তির দিশারী এমন এক ব্যক্তি মন্দির নির্মাণ করুক যেখানে সমগ্র জাতির মানুষেরা এসে প্রার্থনা করবে। অতএব এই সম্মান পেলেন দাউদের পুত্র শলোমন। দাউদ ছাড়া অন্যান্য রাজাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই এখানে বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন, যেখানে রয়েছে তাঁর মন্দির নির্মাণের এবং শাসনকালের বিবরণ।
এই পুস্তকের শেষ অংশ, নির্বাসন থেকে ফিরে আসা লোকদের অভিজ্ঞতার বিবরণ। দ্বিতীয় প্রজন্মের ফিরে আসা যিহূদাবাসীদের নেতা ইষ্রা ও নহিমিয়ের ব্যক্তিগত স্মৃতিচিত্র এই ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত। এইসব নেতৃবৃন্দ আশপাশের জাতিগুলির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী তৈরি করার কাজে সহায়তা করলেন এবং জেরুশালেমের ভগ্ন প্রাচীর নতুন করে গড়ার কাজ পরিচালনা করলেন। এর মধ্যে আর একটা বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তা হল, ইষ্রা ও নহিমিয়ের নেতৃত্বে চুক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার মহোৎসবের বিবরণ।
এই যে বৃহৎ ইতিহাস—যাকে সঠিকভাবে মন্দিরের ইতিহাস বলা চলে—তার একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুধ্যান হল, খাঁটি আরাধনা আমাদের নিয়ম অনুযায়ী নয়, ঈশ্বরের নিয়ম অনুযায়ীই করতে হবে। প্রকৃত আরাধনায় সর্বজাতিকে স্বাগত জানানোর জন্যই ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে মনোনীত করেছিলেন। তাঁর এই উদ্দেশ্যকে সিদ্ধ করার জন্য, ইতিহাসের বিভিন্ন গতিপথের উত্থানপতনের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর আজও কাজ করে চলেছেন।