ভূমিকা
ইস্রায়েল জাতির চুক্তিকৃত ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের মাঝে রূতের বিবরণ নামের এই সংক্ষিপ্ত পুস্তকটি একটি সেতুর মতো। প্রথম অংশটির (আদি পুস্তক—বিচারকর্তৃগণ) মূল আলোচ্য বিষয়, কীভাবে অব্রাহামের বংশধরেরা একটি জাতিতে পরিণত হল এবং ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে ঈশ্বরের স্থাপিত চুক্তি। আর দ্বিতীয় অংশটির বিষয় (শমূয়েল—রাজাবলি), ইস্রায়েল জাতির রাজাদের কাহিনি এবং ইস্রায়েলের রাজকীয় বংশের প্রধান হিসেবে দাউদের সঙ্গে ঈশ্বরের স্থাপিত চুক্তি। প্রারম্ভে বিচারকর্তৃগণের যুগের কথা এবং শেষে দাউদের বংশতালিকার মাঝে রূতের বিবরণ একটি উত্তরণ হিসেবে কাজ করেছে।
এই পুস্তকটি দেখলে মনে হয়, যেন দাউদের রাজা হওয়ার অধিকারকে সমর্থন করার জন্যই এটি লেখা হয়েছিল। কারণ তিনি ছিলেন রূত নামের মোয়াবীয় নারীর প্রপৌত্র। ইস্রায়েলীদের মিশর দেশ থেকে চলে আসার যাত্রাপথে মোয়াবীয়রা যেহেতু কোনো সাহায্য করেনি তাই মোয়াবীয় জাতির কোনো বংশধরকে ইস্রায়েল জাতির অন্তর্ভুক্ত করার অনুমোদন পরবর্তী দশ প্রজন্ম পর্যন্ত তাদের বিধিব্যবস্থায় ছিল না। কিন্তু মোয়াবীয়রা যদি ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে সংযুক্ত হতে না পারে তাহলে পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে কেউ একজন রাজার দায়িত্ব পালন করবে কীভাবে?
এই পুস্তকটির গঠন একটি মঞ্চস্থ নাটকের মতো। এর প্রতিটি দৃশ্যের বৈশিষ্ট্য হল, একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকা এবং তারপর দুটি চরিত্রের মধ্যে বাক্য বিনিময়। পুস্তকটি শেষ হচ্ছে দশ প্রজন্ম দীর্ঘ একটি বংশতালিকার বিবরণ দিয়ে যার সমাপ্তি দাউদকে দিয়ে। সুতরাং এই পুস্তকটির গঠনের মধ্যেই এর উদ্দেশ্য প্রতিফলিত, যেখানে বলা হয়েছে, যে জাতিকে দশ প্রজন্ম ধরে প্রায় বহিষ্কার বা বর্জন করে রাখা হয়েছিল, সেই জাতিরই এক নারীর অন্তরে প্রকৃত ও খাঁটি বিশ্বাস বজায় ছিল।
এছাড়াও এই পুস্তকটি আর একটি দিককে তুলে ধরে যে, এই জগতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলি কীভাবে সম্পূর্ণ হয়। ঈশ্বরের উত্তম বিধিবিধান (দরিদ্র মানুষদের মাঠ থেকে শস্য কুড়াতে দেওয়া), বিভিন্ন ঘটনার ঊর্ধ্বে তাঁর বিচক্ষণ পরিচালনা এবং বিভিন্ন ব্যক্তির করুণা, এসব কিছু মিলেমিশে এই কাহিনিকে এক মুক্তিলাভের উপসংহারে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।