ভূমিকা
ভাববাদী যিরমিয় চল্লিশ বছর ধরে যিহূদা রাজ্যের উদ্দেশে ভাববাণী বলেছেন—যা আসিরীয় যুগের পরিসমাপ্তি থেকে শুরু করে ব্যাবিলনের হাতে যিহূদা রাজ্যের ধ্বংস পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পুস্তকে যিহূদা রাজ্যের শেষ বছরগুলিতে যিরমিয়ের অভিজ্ঞতার ধর্মোপদেশ, ভাববাণী ও আত্মজীবনীর বর্ণনা মিশ্রিত অবস্থায় রয়েছে। তাঁর যে সহসাথী যিহূদাবাসীরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, এমনকি তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদের কাছে ঈশ্বরের বাণী প্রকাশ করার সময় এই ভাববাদীর হৃদয়ের একটা অন্তরঙ্গ ছবি আমরা দেখতে পাই।
পুস্তকটির শুরুতে ও শেষে রয়েছে সেই ঘটনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রসঙ্গগুলির উল্লেখ, যে ধরনের ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য যিরমিয় সুপরিচিত ছিলেন: জেরুশালেমের পতন। পুস্তকটির চারটি প্রধান ভাগের বিষয়ের মধ্যে মোটামুটিভাবে (ক্রমানুসারে) রয়েছে ভাববাণী, আখ্যান (দুটি ভাগে) এবং তারপর আবার ভাববাণী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, উপরোক্ত চারটি ভাগের প্রত্যেকটি শেষ হচ্ছে একটি পুস্তকে বা গোটানো পুঁথিতে লেখা যিরমিয় কথিত বাক্যগুলির উল্লেখ করে। এই পুস্তকের মাঝের বর্ণনায় একটি দীর্ঘ কাব্যিক ছন্দের ভাববাণীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং যিরমিয় কথিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলি এই পুস্তকের শুরুতে, মধ্যে ও শেষে রয়েছে যা তাদের গুরুত্বকে প্রকাশ করে। মানুষের অন্তরের পরিবর্তনের জন্য এক নতুন চুক্তি নির্মাণের যে প্রতিশ্রুতি মাঝের অংশের ভাববাণীতে দেওয়া হয়েছে, তাকেই এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ঈশ্বর শুধু মন্দতাকে শাস্তিই দেন না—তিনি উত্তমতা দিয়ে মন্দতাকে পরাজিতও করেন।
যিরমিয় পুস্তকটি স্থান ও কালের মধ্যে আমাদের আগে ও পরে নিয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু এর মূল বিষয়টি অটুট রয়েছে। অন্যায় কাজের জন্য দণ্ডাজ্ঞার বার্তার পরেই রয়েছে ক্ষমা ও নতুন জীবনের পুনরুদ্ধারকারী শক্তির কথা: তুমি উৎপাটন করবে ও ভেঙে ফেলবে, ধ্বংস ও পরাস্ত করবে, গঠন ও রোপণ করবে।