ভূমিকা
সমগ্র জগতের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ঈশ্বর কীভাবে ইস্রায়েল জাতিকে গড়ে তুললেন, সেই কাহিনির পরবর্তী অংশ যাত্রা পুস্তক, লেবীয় পুস্তক ও গণনা পুস্তকে বলা হয়েছে। ইস্রায়েল জাতি যখন মিশরে দাসত্বশৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল তখন ঈশ্বর তাদের কাছে এলেন এবং মোশির মাধ্যমে সপ্রতাপে তাদের রক্ষা করলেন। ঈশ্বর সীনয় পর্বতে মোশির কাছে তাঁর দশাজ্ঞা সহ অন্যান্য বিধিবিধান প্রকাশ করলেন এবং সদ্যগঠিত ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে তাঁর কৃত চুক্তিকে সুনিশ্চিত করলেন। ইস্রায়েল জাতি এক “সমাগম তাঁবু” নির্মাণ করল যাতে ঈশ্বর তাদের মধ্যে বাস করতে পারেন। এরপর তারা মরুপ্রান্তরের মধ্যে দিয়ে কনান দেশের দিকে অগ্রসর হল।
যাত্রা পুস্তক, লেবীয় পুস্তক ও গণনা পুস্তকের মধ্যে বিভাজনরেখা খুব একটা স্পষ্ট নয়। বিভিন্ন স্থানে ইস্রায়েল জাতির যাত্রাবিরতি এই পুস্তকগুলির মূল কাঠামো। বিরতির প্রত্যেকটি স্থান উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেইসব স্থানের ঘটনাবলি বর্ণনা করা হয়েছে। এইসব স্থানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীনয় পর্বত; সেখানে কী কী ঘটেছিল তা, যাত্রা পুস্তকের দ্বিতীয় অংশে, সমগ্র লেবীয় পুস্তকে এবং গণনা পুস্তকের শুরুর দিকে বর্ণনা করা হয়েছে। সদাপ্রভু ইস্রায়েল জাতিকে যেসব বিধি এবং নিয়মকানুন প্রদান করেছিলেন সেগুলি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে লেবীয় পুস্তকে। আর গণনা পুস্তকে বিবৃত করা হয়েছে, ইস্রায়েল জাতি কীভাবে শক্তিশালী যোদ্ধারূপে নিজেদের সুসংগঠিত করল এবং তাদের প্রতিশ্রুত দেশের দিকে অগ্রসর হল।
লেবীয় ও যাত্রা পুস্তকে ফিরে দিয়ে গণনা পুস্তক সেই বাক্যাংশ পুনরায় প্রয়োগ করেছে যা আদি পুস্তকের পরিকাঠামো স্বরূপ: হারোণ ও মোশির বংশবৃত্তান্ত ছিল এইরূপ: (গণনা পুস্তক 3:1) এই বাক্যটি আমরা প্রায় বারো বার শুনতে পাই ঠিক যেমন বারোটি গোষ্ঠী সংঘবদ্ধ হয়ে একটিমাত্র জাতিতে পরিণত হচ্ছিল। গণনা পুস্তকের একেবারে প্রায় শেষের দিকে ভাববাদী বিলিয়ম ইস্রায়েল জাতিকে বলেন, যে তোমাকে আশীর্বাদ করে তারা হবে আশিস ধন্য, যে তোমাকে অভিশাপ দেয় তারা হবে অভিশপ্ত! এটি আদি পুস্তকে অব্রাহামকে দেওয়া ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দেয়, যারা তোমাকে আশীর্বাদ করবে, আমি তাদের আশীর্বাদ করব, আর যারা তোমাকে অভিশাপ দেবে, আমি তাদের অভিশাপ দেব। এইসব প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলি থেকে বোঝা যায় যে, এই পুস্তকগুলি জগতে ঈশ্বরের পরিত্রাণ কাজের সূচনা একযোগে তুলে ধরেছে।