ভূমিকা
যীশুর শিষ্য যোহন রোমীয়দের হাতে বন্দি হয়ে পাটম দ্বীপে নির্বাসিত হয়েছিলেন। সেখানেই ঈশ্বর তাঁকে প্রভু যীশুর বিষয়ে এই ভাববাণী দান করেন। এই পুস্তকে প্রভু যীশু সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি যাজক ও রাজা (1), মণ্ডলীগুলির বিচারকর্তা (2–3), স্রষ্টা (4), উদ্ধারকর্তা (5), ইতিহাসের প্রভু (6–18), বিজয়ী (19–20) এবং পাত্র বা বর (21–22)। মেষশাবক শব্দটি খ্রীষ্টের মূল নামরূপে এই পুস্তকে ব্যবহৃত হয়েছে। যীশু যে জগতের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন, যোহন সেই সত্য বিস্মৃত হতে দেননি।
এই পুস্তকের অন্য একটি প্রধান শব্দ হল সিংহাসন। শব্দটি চল্লিশবার এই পুস্তকে ব্যবহৃত হয়েছে। স্বর্গে মেষশাবকের সিংহাসন ও মর্ত্যে শয়তানের সিংহাসনের মধ্যে সংঘর্ষের কথা প্রকাশিত বাক্যে বর্ণিত আছে। বর্ণনাকালে যোহন স্বর্গের আরাধনা ও পৃথিবীতে যুদ্ধবিগ্রহের কথা উল্লেখ করে প্রভু যীশুকে বিজয়ীরূপে চিত্রিত করেছেন। দিন যতই অন্ধকারময় হোক, অথবা অশুভ শক্তি যতই প্রবল হোক, চূড়ান্ত বিজয় হবে ঈশ্বরের মেষশাবকেরই। এর মূল পদ 1:19 যোহনকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়েছিল, তিনি অতীতে যা দেখেছেন (1), যেসব বিষয় বর্তমান ছিল (2–3) এবং যে সমস্ত ঘটনা সংঘটিত হবে (4–11) সেইসব বিষয়। প্রকাশিত বাক্যের 6–19 অধ্যায়ের সঙ্গে মথি 24 অধ্যায় ও মার্ক 13 অধ্যায়ের সাযুজ্য আছে, যা সদাপ্রভুর দিন বা মহাসংকটকালের বিষয় বর্ণনা করে। এই সংকটকালের প্রথম ভাগের বর্ণনা আছে 6–9 অধ্যায়ে, মধ্যভাগের বর্ণনা আছে 10–14 অধ্যায়ে এবং অন্তিম ভাগের বর্ণনা আছে 15–19 অধ্যায়ে। এই পুস্তকে যোহনের ব্যবহৃত বিভিন্ন সংখ্যা ও প্রতীকগুলি সম্পর্কে ঈশ্বরের লোকেরা ভিন্নমত হলেও, এদের অধিকাংশ জনই এই বিষয়ে একমত যে, শেষের দিনগুলিতে মন্দের আধিক্য হবে, বিশ্বব্যাপী একটিমাত্র শাসনব্যবস্থা ও একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, শয়তান সচেষ্ট হবে ঈশ্বরভক্তদের বিনষ্ট করতে, বিদ্রোহাত্মক পৃথিবীতে ঈশ্বর তাঁর ক্রোধ বর্ষণ করবেন, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আগমন হবে এবং তিনি তাঁর আপনজনেদের উদ্ধার করে তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করবেন। যারা সেই সময় নিপীড়িত হচ্ছিল, তাদের প্রেরণাদানের জন্য যোহন এই পুস্তকটি রচনা করেন।
প্রতিটি খ্রীষ্টীয় প্রজন্ম তৎকালীন খ্রীষ্টারি ও ব্যাবিলন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু খ্রীষ্টের পুনরাগমনের প্রত্যাশা পবিত্রবর্গের অগ্রগতিকে স্তব্ধ হতে দেয়নি, যদিও তাদের একনিষ্ঠতা বাস্তব অর্থেই ছিল দুরূহ ও কষ্টকর। আদি পুস্তকে ঈশ্বর যে কাজ শুরু করেছেন, প্রকাশিত বাক্যে ঘটেছে তারই চরম পরিণতি। আদি পুস্তকে ব্যবহৃত বহু প্রতীকের কথা এই পুস্তকে পুনরুল্লিখিত হয়েছে: জ্যোতি ও অন্ধকার, নক্ষত্রসমূহ, ব্যাবিলন, বধূ, উদ্যান, জীবনবৃক্ষ, সাপ, এসব। হাল্লেলুইয়া শব্দটিরও উল্লেখ বাইবেলে কেবলমাত্র এই পুস্তকেই পাওয়া যায়। প্রভু যীশুই আদি ও অন্ত, তিনি যার সূচনা করেন, তা সমাপ্তও করেন।
রচয়িতা: প্রেরিতশিষ্য যোহন
রচনার স্থান: পাটম দ্বীপ
রচনাকাল: আনুমানিক 96 খ্রীষ্টাব্দ
রচনার বিষয়বস্তু: শয়তান ও তার সহযোগীদের উপরে খ্রীষ্ট ও তাঁর মণ্ডলীর বিজয়লাভ