ভূমিকা
মধ্যপ্রাচ্যে পরম্পরাগত বৈবাহিক অনুষ্ঠানে বর ও কনেকে রাজা ও রানির ভূমিকায় দেখা হয়। বিয়ে উপলক্ষে আয়োজিত এই ধরনের উৎসব-অনুষ্ঠানের অনুষঙ্গ হল, প্রেমের গান, সেই সঙ্গে এমন কিছু বিশেষ গান যেখানে কনের রূপ-যৌবনের সৌন্দর্য বা বরের অপূর্ব দেহসৌষ্ঠবের প্রশংসা করা হয়। এই প্রথার এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে এবং সেগুলি এইসব বিবাহ-সংগীতের রচনাসংকলনগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে যাকে আজ আমরা পরমগীত বলে জানি। সম্ভবত এইসব গান স্বতন্ত্রভাবে বিবাহের আনন্দ অনুষ্ঠানে বারংবার ব্যবহৃত হত এবং কালক্রমে সেগুলিকে এক স্থানে সংকলিত করা হয়, ঠিক যেভাবে গীতসংহিতার গানগুলি উপাসনায় বহু বছর যাবৎ ব্যবহার করার পর সংকলিত হয়েছিল। এই পুস্তকের শিরোনাম শলোমনের পরমগীত রাখা হয়েছে এটি বোঝাবার জন্য যে, রাজা শলোমন ছিলেন এক বিখ্যাত গীতিকার (দ্রষ্টব্য, 1 রাজাবলি 4:29-34), এবং তিনিই এই গীতগুলির রচয়িতা। তবে এখানে রাজা শলোমনের উল্লেখ এই কারণেও হতে পারে যে, বর তার মতোই এক মনোহর ও জমকালো ব্যক্তিত্ব।
একটি নারী ও পুরুষের পূর্বরাগ, তদের বিয়ে (যা রাজকীয় বিয়ে হিসেবে বর্ণিত), তার পরিপূর্ণতা এবং তাদের দুজনের শুরু করা নতুন জীবনের অধ্যায় বর্ণনা করার জন্যই এই গীতগুলিকে পরপর সাজানো হয়েছে। পুস্তকটি একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর ছয়টি পর্যায় বা উপকাহিনির অবতারণা করেছে, যার প্রত্যেকটি শেষ হয়, স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে, নারী ও পুরুষের বন্ধুবান্ধবীদের উল্লেখ করে। এগুলির দ্বারা সম্ভবত বিয়েবাড়ির উৎসবে শামিল অন্যদের কথা বোঝানো হয়েছে। সব মিলিয়ে এই গানগুলি বৈবাহিক প্রেমের আনন্দ এবং মানবদেহের সৌন্দর্যকে নৈসর্গিক জগতের অপূর্ব সব চিত্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যাপন করেছে এবং দেখিয়েছে, এগুলি সৃষ্টিরই অংশ, যে সৃষ্টিকে ঈশ্বর উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন।