ভূমিকা
দানিয়েলের পুস্তক দুই ধরনের সাহিত্যের আঙ্গিককে যুক্ত করেছে: রাজদরবারের বর্ণনা এবং রহস্য উন্মোচন। পুস্তকটির সূচনায় বর্ণনামূলক অংশে উপস্থাপিত ছয়টি কাহিনিতে বলা হয়েছে, ব্যাবিলনে বন্দি করে নিয়ে আসা চারজন যুবককে ঈশ্বর কীভাবে রক্ষা করলেন এবং তাদের পদোন্নতি ঘটালেন। দানিয়েল ও তার তিন বন্ধু শদ্রক, মৈশক ও অবেদনগো যখন ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বস্ততা দেখালেন তখন ঈশ্বরের পরাক্রান্ত কাজের দ্বারা তারা মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেলেন। দানিয়েলকে স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার সক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে তিনি প্রথমে ব্যাবিলনের রাজদরবারে এবং পরে পারস্য সাম্রাজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করেন।
পুস্তকটির দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে স্বর্গদূতদের মারফৎ ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া দানিয়েলের দর্শন ও বাণীগুলির বর্ণনা। এই দর্শনগুলিকে গূঢ়, রহস্যময় ভাষায় এবং প্রতীকের মাধ্যমে উপস্থাপিত করা হয়েছে, যা হুবহু রহস্য-উন্মোচক সাহিত্যের মতো। এগুলির মধ্যে আমরা পূর্বদিকের দেশগুলির ইতিহাসের রূপরেখা দেখতে পাই। যেমন: ব্যাবিলন ও পারস্য সাম্রাজ্য; মহান আলেকজান্ডারের বিজয় অভিযান; এবং মিশরে টলেমি গোষ্ঠী ও সিরিয়াতে সেলেউসিয়াদদের মধ্যে ক্রমাগত সংঘর্ষ। এই দর্শনগুলি যে উদ্ধত শাসকের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল তিনি হলেন সেলেউসিয়াদ জাতির সম্রাট, পঞ্চম অ্যান্টিয়কাস, যিনি 167 খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে জেরুশালেমের মন্দিরকে অপবিত্র করেন। এর ফলে ঘটে মাক্কাবী বিদ্রোহ, যা জাতির স্বাধীনতাকে পুনরুদ্ধার করে এবং ইস্রায়েল জাতির ঈশ্বরের আরাধনাকে সংরক্ষিত করে।
দানিয়েলের দর্শনগুলিকে বর্তমান যুগের সমাপ্তিকালের পরিস্থিতিকে প্রকাশ করার দৃষ্টিকোণ থেকেও উপলব্ধি করা যেতে পারে, যা নিশ্চিতরূপে ঈশ্বরের প্রজা ও তাদের শত্রুদের মধ্যে এক চূড়ান্ত সংঘর্ষের কথা বলে। কিন্তু ঈশ্বরের লোকেরা নির্যাতনের মধ্যেও টিকে থাকবে, কারণ তারা জানে তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হবে।