ভূমিকা
উপদেশক পুস্তকটি একজন “শিক্ষক” বা “প্রচারকের” কথামালার সংকলন। এই উপদেশককে জেরুশালেমে রাজত্বকারী ইস্রায়েল জাতির রাজা এবং দাউদের পুত্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই দুটি কথা থেকে বোঝা যায় যে, ইনি ছিলেন যিহূদা রাজবংশের লোক। এরপর তার আর কোনো পরিচয় দেওয়া হয়নি এবং পরম্পরাগতভাবে যেহেতু তাকে শলোমন বলে উল্লেখ করা হয়, তাই এই ছদ্ম আবরণকে যথাস্থানে রেখে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
এই পুস্তকে বারংবার উচ্চারিত, অসার! অসার! সবকিছুই অসার! কথাগুলি আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, জীবনের পুরস্কারগুলি অনিশ্চিত এবং পরিশেষে অতৃপ্তিদায়ক। এই সম্যগদর্শনটি নিয়ে এই উপদেশক কখনও গদ্যে, কখনও পদ্যে, কখনও আত্মজীবনী ও কখনও বা সরাসরি শিক্ষাপ্রদানের মাধ্যমে এক দীর্ঘ আলোচনা চালিয়ে গেছেন। এই পুস্তকে রয়েছে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ, তোলা হয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন এবং সেগুলি ঘুরেফিরে আসে মূল অনুধ্যানে, অনেকটা বাতাসের মতো যা—ঘুরতে থাকে, আর নিজের পথে ফিরে আসে।
উপদেশক যখন বলেন, যা বাঁকা তা সোজা করা যায় না, তখন তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের জগতে কোনো এক মন্দতা জোর করে ঢুকে পড়েছে। শাস্ত্রের বাকি পুস্তকগুলিতে ইহুদি জাতির বৃহত্তর কাহিনিতে এই বিষয়টি খাপ খেয়ে যায়। সবকিছুকে পুনরায় সঠিকভাবে গড়ে তোলাই হল, এই বিশাল নাটকের মূল আখ্যান। তবে জগতকে সোজা করে তোলার জন্য ঈশ্বরের প্রচেষ্টার বিষয়ে উপদেশক আমাদের কিছু বলেননি। তিনি এটুকু বলেই সন্তুষ্ট যে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর অসীম ও জগতের সবকিছুর উপর তিনি সার্বভৌম এবং আমাদের কর্তব্য হল, বেঁচে থাকার জন্য তাঁর পথের অনুসারী হওয়া কেননা, ঈশ্বর প্রত্যেকটি কাজের বিচার করবেন।