ভূমিকা
হিতোপদেশের প্রজ্ঞায় বলা হয়েছে, ধার্মিক মানুষ কীভাবে সচরাচর সাফল্য লাভ করে। এই কথাকেই উপদেশক সতর্কিত ভঙ্গিতে বলেছে, সততার জন্য পুরস্কার লাভের কোনো নিশ্চয়তা নেই, কেননা আমাদের জগতে এক ধরনের কুটিলতার আগমন হয়েছে। ইয়োবের পুস্তক এই ব্যাপারে আর এক ধাপ অগ্রসর হয়েছে এবং বলেছে যে, কীভাবে ধার্মিক মানুষরাও জীবনে প্রচণ্ড দুঃখকষ্ট ভোগ করে। ইয়োবের পুস্তকে প্রাচীন যুগের পরম্পরাগত প্রজ্ঞামূলক সাহিত্যের যে প্রচলিত ধারাকে তুলে ধরা হয়েছে তা হল: কাব্যধর্মী বক্তৃতাভিত্তিক এক দীর্ঘ কথোপকথন।
ইয়োবের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, তিনি একজন সৎ মানুষ। কিন্তু বিপক্ষ (হিব্রু ভাষায় শয়তান) জগতে ঈশ্বরের নৈতিক অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির কথা তুলে ধরেছে যা আপাতদৃষ্টিতে সমস্যাজনক মনে হয়। সততা যদি সর্বদাই পুরস্কৃত হয়, তাহলে কী করে আমরা বুঝব যে, তা ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা নাকি কোনো কিছু লাভ করার লালসা থেকে জাত? তাই ঈশ্বর বিপক্ষকে ইয়োবের জীবনে দুর্দশা ঘটাবার অনুমতি দিলেন।
বিপক্ষের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইয়োব ঈশ্বরকে অভিশাপ দিলেন না, কিন্তু তার তিন বন্ধু ইলীফস, বিল্দদ ও সোফরের সঙ্গে এক দীর্ঘ তর্কযুদ্ধে জড়ালেন। নৈতিকতার জগৎ সম্বন্ধে অতি সংকীর্ণ মনোভাবের কারণে এই বন্ধুদের দৃঢ় ধারণা হয়েছিল যে, ইয়োবের দুঃখদুর্দশার জন্য দায়ী তার পাপ। ইলীহূ নামের এক যুবকও পরে এই কথোপকথনে যোগ দেয় কিন্তু ইয়োব বারংবার বলে চলেছিলেন যে, তিনি কোনো মন্দ কাজ করেননি এবং সেইজন্য তিনি ঈশ্বরের সামনে এক শুনানির দাবি করেন।
অবশেষে ঈশ্বর সৃষ্টির মধ্যে উপস্থিত তাঁর পরাক্রম ও প্রজ্ঞাকে প্রকাশ করলেন। ফলে ইয়োব নতমস্তকে তার সীমিত জ্ঞানকে স্বীকার করে নিলেন। ঈশ্বর যখন ইয়োবের তিন বন্ধুকে তিরস্কার করলেন, তখন আমরা দেখি যে, তারা ইয়োবের তুলনায় অনেক গভীর ধৃষ্টতার অপরাধী। পরিশেষে, ঈশ্বর ইয়োবকে আগের তুলনায় দ্বিগুণ আশীর্বাদ করলেন। এই পুস্তক আমাদের সতর্ক করে দেয় যে, ঈশ্বরের নৈতিক নিয়মকানুনকে আমরা যেন সহজ সূত্রে পরিণত না করি।