ভূমিকা
ইব্রীয়দের প্রতি পত্রের লেখক অজ্ঞাত, তবে এর রচনাশৈলী ও ব্যবহৃত শব্দগুচ্ছ থেকে অনুমিত হয়, সম্ভবত প্রেরিতশিষ্য পৌলই এই পত্রের রচয়িতা। কিছু সংখ্যক ইহুদি খ্রীষ্টবিশ্বাসী পুনরায় ইহুদি-প্রথাপদ্ধতি ও বিধান পালনের সপক্ষে ছিল। পত্রটি তাদেরই উদ্দেশে রচিত হয়েছে। যেহেতু খ্রীষ্টের সম্পূর্ণতায় তাদের আস্থা ছিল না, তাই লেখক খ্রীষ্টের শ্রেষ্ঠত্ব ও তাঁর উপরে বিশ্বাস স্থাপনের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন।
যারা নিরুদ্দিষ্ট বা হারিয়ে গেছে, তারা “মিশরেই” অবস্থান করছে। খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাদের পরিত্রাণের প্রয়োজন আছে। যারা পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তি, তারা ইতিমধ্যে তাদের আত্মিক অধিকার ভোগ করছে এবং খ্রীষ্ট-প্রদত্ত “বিশ্বাসে” প্রবেশলাভ করেছে (4:11; মথি 11:28-30)। কনানে প্রবেশ স্বর্গে যাওয়ার প্রতীক নয়। এ হল শত্রুকে পরাজিত করা এবং বিশ্বাসে নিজস্ব আত্মিক অধিকার দাবি করার একটি চিত্রকল্প। অনেকে পুরোনো নিয়মের ইস্রায়েলীদের মতো অবিশ্বাসে প্রান্তরে উদ্দেশ্যহীন বিচরণ করে এবং পুরোনো জীবনেই ফিরে যেতে সচেষ্ট হয়। ইব্রীয়দের প্রতি লেখা পত্রের বাণী তাদেরই জন্য, “এসো, আমরা সিদ্ধিলাভের চেষ্টায় অগ্রসর হই” (6:1)।
হবক্কূক 2:4 পদের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইব্রীয়দের প্রতি পত্রের লেখক “বিশ্বাসের দ্বারা” শব্দদ্বয়ের উপরে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আমরা সেই বাক্যের অনুসারী হব। আমাদের প্রত্যুত্তর নির্ধারণ করে, আমরা কী ধরনের জীবনযাপন করি এবং আত্মিক অধিকার দাবির মাত্রা আমাদের কতখানি। বিশ্বাসের দ্বারা আমরা পরিত্রাণ লাভ করেছি সত্যি, তবে বিশ্বাসে আমাদের জীবনধারণও করতে হবে।
ইব্রীয়দের প্রতি পত্রের প্রতিটি অধ্যায় খ্রীষ্টের শ্রেষ্ঠত্ব অনবদ্যরূপে ব্যক্ত করে। 1 অধ্যায়ে তিনি ভাববাদীদের ও স্বর্গদূতদের চেয়ে মহান; 2 অধ্যায়ে তিনি আদমের চেয়ে মহান (তুলনা করুন, গীত 8); 3 অধ্যায়ে তিনি মোশি থেকে মহান; 4 অধ্যায়ে তিনি যিহোশূয় থেকে মহান; 5 অধ্যায়ে তিনি হারোণ থেকে মহান; 6 অধ্যায়ে তিনি ধর্মীয় সব নীতিগুলি থেকে মহান; 7 অধ্যায়ে তিনি লেবীয় যাজকত্বের চেয়েও মহান; 8 অধ্যায়ে তিনি পুরোনো নিয়ম (চুক্তি) থেকে মহান; 9 অধ্যায়ে তিনি আবাস তাঁবু থেকে মহান; 10 অধ্যায়ে তিনি সব বলিদান ও নৈবেদ্য থেকে মহান; 11 অধ্যায়ে তিনি পুরোনো নিয়মের সব বিশ্বাস-বীর থেকে মহান; 12 অধ্যায়ে তিনি হেবল থেকে মহান; 13 অধ্যায়ে তিনি পাপবলি, জেরুশালেম ও যে কোনো পার্থিব ধর্মীয় প্রথা থেকে মহান।
পত্রটি পাঠ করে আমাদের জিজ্ঞাসা হওয়া উচিত, আমি কি পেছনের দিকে ফিরে পুরোনো জীবনের জন্য সচেষ্ট হচ্ছি, অথবা খ্রীষ্টে আমার অধিকার দাবি করার জন্য ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছি? আমি কি অবিশ্বাসে মরুপ্রান্তরের উদ্দেশ্যে পরিভ্রমণ করছি, কিংবা তাঁর সাধিত কর্মে ও বিশ্বাসযোগ্য বাক্যে সুস্থিরতা অবলম্বন করছি?
রচয়িতা: অজ্ঞাত (পৌলও হতে পারেন)।
রচনার স্থান: রোম অথবা প্যালেষ্টাইন।
রচনাকাল: আনুমানিক 63–65 খ্রীষ্টাব্দ।
মূল প্রসঙ্গ: ইহুদি ধর্মাচার থেকে খ্রীষ্টানুকরণের। উৎকৃষ্টতা।