ভূমিকা
খ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম শতকের শেষভাগ এবং ষষ্ঠ শতকের প্রথম ভাগই ছিল ভাববাদী যিরমিয়ের জীবনকাল। তাঁহার দীর্ঘ পরিচর্যা কার্যের জীবনে অলীক প্রতিমাপূজা এবং পাপের জন্য জাতির জীবনে অকস্মাৎ মহাবিপর্যয় নামিয়া আসিবে বলিয়া ঈশ্বরের প্রজাদের তিনি সতর্ক করিয়া দিয়াছেন। বাবিলের রাজা নবূখদ্নিৎসরের হাতে যিরূশালেমের পতন, নগর ও মন্দির ধ্বংস এবং যিহূদার রাজা ও বহু লোকের বাবিলে নির্বাসন সম্পর্কে এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হইতে দেখিবার জন্য তিনি জীবিত ছিলেন। পরিশেষে নির্বাসন হইতে তাহাদের প্রত্যাবর্তন ও জাতির পুনরুজ্জীবনের ভবিষ্যদ্বাণীও তিনি করিয়াছিলেন।
যিরমিয়ের লিখিত পুস্তকটিকে চারিটি ভাগে বিভক্ত করা যায়ঃ (১) রাজা যোশিয়, যিহোয়াকীম, যিহোয়াখীন এবং সিদিকিয়ের রাজত্বকালে যিহূদী জাতি ও তাহার রাজাদের নিকটে পরিবেশিত ঈশ্বরের বাণী। (২) যিরমিয়ের সচিব বারূকের স্মৃতি হইতে গৃহীত বিষয়বস্তু এবং তাহার সহিত ভাববাদী যিরমিয়ের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি। (৩) নানা বিদেশী জাতি সম্বন্ধে সদাপ্রভুর বাণী। (৪) একটি ঐতিহাসিক পরিশিষ্ট- যেখানে দেওয়া হইয়াছে যিরূশালেমের পতন এবং বাবিলে নির্বাসনের বিবরণ।
যিরমিয় ছিলেন অত্যন্ত সংবেদনশীল মানুষ। তিনি তাঁহার স্বজাতির মানুষকে ভালবাসিতেন এবং তাহাদের উপর বিচারের রায় ঘোষণা করিতে অপছন্দ করিতেন। এই পুস্তকের বহু অধ্যায়ে তিনি গভীর আবেগে সেই সমস্ত বিষয়ের কথা বলিয়াছেন, সেই বিষয়ে তিনি যন্ত্রণায় জর্জরিত হইয়াছেন কারণ ঈশ্বর তাঁহাকে ভাববাদীর ভূমিকা গ্রহণ ও দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান করিয়াছিলেন। প্রভু সদাপ্রভুর বাক্য তাঁহার বুকে আগুন জ্বালাইয়া দিত- তিনি এইগুলিকে অগ্রাহ্য করিতে পারিতেন না।
পুস্তকটিতে কতকগুলি মহোত্তম বাণী যিরমিয়ের নিজের জীবনের বিপর্যয়ের কালকে অতিক্রম করিয়া সেই দিনের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়াছে, যেদিন একটি নূতন নিয়ম সম্পাদিত হইবে এবং সেই নিয়মের কথা কোন শিক্ষকের শিক্ষা ছাড়াই মানুষ মনে রাখিবে। কারণ উহা লিখিত হইবে তাহাদের হৃদয়ে (৩১:৩১-৩৪)।
বিষয়বস্তুর রূপরেখা:
যিরমিয়ের আহ্বান - ১:১-১৯
যোশিয়, যিহোয়াকীম, যিহোয়াখীন এবং সিদিকিয়ের সময়ের ভবিষ্যদ্বাণী - ২:১—২৫:৩8
যিরমিয়ের জীবনের ঘটনা - ২৬:১—৪৫:৫
জাতির বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী - ৪৬:১—৫১:৬৪
যিরূশালেমের পতন - ৫২:১-৩৪